নাটোর সদরে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। খুব অল্প বয়স থেকেই গাছের যত্ন নেয়ার প্রতি ছিল আমার ভিষণ আগ্রহ। এ ভালবাসা এবং আবেগের বশেই আমি কৃষি ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে, আমি একটি কীটনাশকের দোকান দিই। পরবর্তীতে, ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে আমার জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগাতে নিজের ফার্ম শুরু করার কথা ভাবি।
আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আশেপাশের অনেকেই আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। কারণ আমার না ছিল উচ্চশিক্ষা, না ছিল ব্যবসায় ডিগ্রি। কিন্তু তার কারণে আমি পিছপা হইনি। ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে নানা কাঠখড় পেরিয়ে শহিদুল ফার্মার্স হাব এখন একটি সফল প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আমি একই সাথে আমার দোকান এবং ফার্ম পরিচালনা করছি।
সিনজেন্টা ফাউন্ডেশন ফর এগ্রিকালচার এর সহযোগিতায়, শহিদুল ফার্মার্স হাবে ১৫০ জাতের উদ্ভিদ এবং শাকসবজি রয়েছে। আমাদের মূল পণ্য হচ্ছে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ যেমন- অ্যালোভেরা, বাসক, তুলসী ইত্যাদি। এই পণ্যগুলি আমরা খুচরা বিক্রেতা ও বড় সংস্থা উভয়ের কাছেই বিক্রি করি।
মহামারিতে আমার ব্যবসাটি ৩-৪ মাস ধরে বন্ধ ছিল এবং এতে প্রায় ২-৩ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়। কিন্তু আমি এতে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজের চাষাবাদ চালিয়ে যাই। সামনে সুদিন আসবে, এ অটুট বিশ্বাসই ছিল আমার অনুপ্রেরণার যোগান।
আমার এত বছরের ব্যবসায়, আমি সব সিদ্ধান্ত সবসময় নিজে নিয়েছি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে, একটি সফল ব্যবসা দাঁড় করাতে হলে ঝুঁকি নিতেই হবে। আমার কাজ করার বাঁধা-ধরা কোনো সময় নেই। মৌসুমের উপর আমার কাজের চাপ নির্ভর করে। যেমন ফসল ফলানোর সময় হলে আমি ভোরবেলা থেকে শুরু করে দিনে ১৪-১৫ ঘন্টা পর্যন্তও কাজ করি। ফসল কাটার মৌসুমে আমি ৫-৬ জন কর্মী নিয়োগ করি। আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, আমি সবসময় ব্যাবসা সম্পর্কিত নতুন জ্ঞান অর্জনে কৌতূহলি থাকি। সেই সূত্রেই ২০১৭-১৮ সালে আমি লাইটক্যাসল পার্টনার্স স্মার্টক্যাপ এক্সেলেরেটর প্রোগ্রামে যোগ দিই। পরবর্তী সময়ে, আমার ব্যবসায় পাঁচগুণ বেশি লাভ হয়।
আমার খুব দুঃখ হয়। আমার দেশের তরুণ সমাজ ধীরে ধীরে কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে এবং শিল্প উৎপাদনের প্রতি ঝুঁকছে। কৃষিকাজ আমার রক্তের মাঝে মিশে আছে, এ দিয়ে আমি জীবন চালাই; এ কাজ যে আমাকে কতটা আনন্দ দেয় তা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। হয়তো এ কারণেই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের তরুণদের কৃষিকাজে যোগ দেওয়া উচিত। আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর দেশ। বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কেন এই সুযোগ হাতছাড়া করব?
আমার জীবনের পরবর্তী লক্ষ্য বাংলাদেশে ভেষজ চা জনপ্রিয় করা। ভেষজ চা এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হল, এটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সহায়ক। আমি ইতোমধ্যে ৫ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছি। আমি আমার পণ্য বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দিতে চাই যাতে প্রত্যেকে এটি থেকে উপকৃত হতে পারে।