স্মার্ট লেদারস
1,243 Views

২০০৮ সালে আমার ব্যবসা শুরু করার আগে আমি লেদারের কাঁচামাল একটি ট্যানারি থেকে কারখানায় সরবরাহ করতাম। কিছু বছর যাবার পরে, আমি দেখলাম যে চাইনিজ লেদার ব্যাগের অনেক চাহিদা আছে আমাদের বাজারে। সেখান থেকেই আমি বাজারের সেই চাহিদা নিয়ে কাজ করার কথা ভাবলাম। আর সে ভাবনা থেকেই আমি আমার ব্যবসা শুরু করার অনুপ্রেরণা পাই।

দেখতে দেখতে প্রায় ১৪ বছর হয়ে গেল আমার স্মার্ট লেদার প্রতিষ্ঠানটির। আমি জানি বিষয় টা অবিশ্বাস্য কিন্তু আমি এতো বছর ধরে সবকিছু নিজেই করে আসছি। আমার পরিবার থেকে কোনো সাহায্য তো করেইনি বরং আমাকে সবসময় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিষয়টা আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল কিন্তু আমি তাও থেমে থাকিনি। এতবছর নিষ্ঠা ও একগ্রতার সাথে ব্যবসা করে আসার পরে এখনও আমাকে অনেক ধরনের নেতিবাচক কথা শুনতে হয়। কিছু মানুষ একজন নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে একদমই প্রস্তুত নয়। তারা সবসময় বলে এসেছে যে যদি আমার অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে যেনো আমি ব্যবসা ছেড়ে চাকরি করি কিন্তু আমার উত্তর একটাই ছিল, “আমি চাকরি কেনো করব, যখন আমি এত লোকের জন্য চাকরির যোগান দিতে  পারি?”

ব্যবসা করতে গেলে অনেকধরণের সমস্যার সম্মুখিন  হয় কিন্তু আমার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা ছিল বিনিয়োগ। আমি একবারে প্রথমে আমার গয়না বিক্রি করে ৭০,০০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ওই টাকা দিয়ে আমি দুটো পুরনো মেশিন ও একটি জায়গা ভাড়া নিয়েছিলাম। আমার জন্য ঐটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এরপরে আমি মার্কেন্টাইল ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। আমি এইটা গর্ব করে বলতে পারি যে আমি ইতিমধ্যে আমার প্রাথমিক বিনিয়োগের অর্থ তুলে ফেলেছি এবং অনেকটুকু ঋণও পরিশোধ করে দিয়েছি।

আমার ব্যবসা ভালই চলছিল এই করোনা মহামারী আসার আগে পর্যন্ত।করোনার কারণে আমার অনেক গুলো ক্লায়েন্ট ও অর্ডার হারাতে হয়েছে। মূলত এইসব ক্রেতারা সৌদি আরব, কানাডা, আমেরিকা থেকে আমার পণ্য ক্রয় করত। কিন্তু লকডাউনএর কারণে আমার রপ্তানির বাজার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন যদিও বাজার আস্তে আস্তে আবার চালু হচ্ছে কিন্তু শুধু কানাডায় আমি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি।

আমি উইকানেক্ট নামক একটি প্রশিক্ষণ থেকে লাইটক্যাসল সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমি প্রশিক্ষণটি উপভোগ করেছি এবং তারপরে আমি তাদের বলেছিলাম যে আমি আরও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে চাই। তারপর আমি নিজে থেকে বি-স্কিলফুল প্রকল্পের সাথে জড়িত হই। আমার ব্যবসা এই প্রশিক্ষণগুলো থেকে লাভবান হতে শুরু করে। 

আমার ব্যবসার জন্য পূর্বপরিকল্পিত কিছু চিন্তাভাবনা আছে। খুব প্রথম থেকেই, আমার স্বপ্ন ছিল যে আমার কারখানাটি কর্মসংস্থানের উন্নতি করতে সহায়তা করবে এবং এভাবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে। আমি যশোরে একটি কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছি এবং কিছু লোককে নিযুক্ত করতে সাহায্য করেছি। এখন যেধরণেরই পরিস্থিতি আসুক না কেন, আমি থেমে থাকতে চাইনা এবং যশোরে যেখানে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি থাকেন সেখানে কারখানা তৈরি করে বেকারত্ব কমাতে চাই। আমি ইতিমধ্যে জমি কিনে ফেলেছি, এখন বাকিটুকু আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভরশীল।