পরিবারকে আর্থিকভাবে সমর্থন করার জন্য আমাকে খুব অল্প বয়স থেকেই কাজে নেমে পড়তে হয়েছিল। এইচএসসি শেষ করার পরপরই আমাকে বিভিন্ন ছোটখাট কাজে লেগে যেতে হয়। তারপর একদিন বগুড়ার স্থানীয় এলাকার একটি ইটের কারখানায় কাজের সন্ধান পাই। আমার টাকার প্রয়োজন ছিল, তাই আমি কাজটি শুরু করি। তিন বছর কাজ করার পর আমি বুঝতে পারলাম, এই সামান্য টাকা দিয়ে আমার পরিবার আর চলবে না। আমি চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করলাম, মাছের ব্যবসা।
১৯৯৬ সালে যখন আমি ব্যবসা শুরু করি, আমার বয়স কম ছিল, আরো কম ছিল ব্যবসার জ্ঞান। ব্যবসার খু্ঁটিনাটি সম্পর্কে আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। তাই আমাকে সবকিছু হাতে-কলমে শিখে শিখে করতে হয়েছিল। প্রথমদিকে, আমি আমার উদ্যোগে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্তু ব্যবসা না চলার কারণে আমার পুরো টাকাটাই ক্ষতি হয়। আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি। একেবারেই হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম, ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতে পাচ্ছিলাম।
কিন্তু মনের কোনায় কোথায় যেন সাহস লুকিয়ে ছিল। আমি থামলাম না। বাবার জমি বন্ধক রেখে দুই লক্ষ টাকা এনে আবার ব্যবসায় বিনিয়োগ করি। এবার আমি জানতাম কোন ভুলগুলি করা যাবেনা। ব্যবসা সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান ছিল, সাথে ছিল আত্মবিশ্বাস। আমার ব্যবসা এবার ভালমতই চলছিল, কিন্তু যথেষ্ট বৃদ্ধি হচ্ছিল না। আমি কীভাবে আমার লাভ বাড়াতে পারি, তা বুঝতে পারছিলাম না। তারপরে একদিন উপজেলা ফিশারি কাউন্সিল সম্পর্কে জানলাম। সেখানে তারা আমার মতো অনেক মাছ ব্যবসায়ীকে ব্যবসায় লাভ করার উপায় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। আমি আমার ব্যবসার অবস্থার উন্নতির জন্য তাদের সহায়তা চাইলাম। শুধুমাত্র তারাই ছিল আমার আশার আলো। তারা ব্যবসার বেচাকেনা থেকে শুরু করে বিপণন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের প্রশিক্ষণ দিলেন। তারা আমাদেরকে ভাল জাতের মাছ চেনার এবং এদের যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কেও শেখান।
উপজেলা ফিশারিস কাউন্সিলের প্রশিক্ষণের পর আমার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ায়। আমি বুঝতে পারি কোন সমস্যাগুলির কারণে আমার ব্যবসার লাভ কম হচ্ছিল। আমি সেগুলো শুধরাই। তারপর থেকে আমার ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এখন আমার বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকা। উপজেলা ফিশারিস কাউন্সিল থেকে আমি ওয়ার্ল্ড ফিশ সম্পর্কে জানতে পারি এবং তাদের আইডিয়া প্রজেক্ট এর সাথে যুক্ত হই। এ প্রজেক্ট থেকে আমি অনেক অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শিখি। পাশাপাশি, আমি লাইটক্যাসল পার্টনার্সের এক্সেলেরেটর প্রোগ্রামেরও অংশ ছিলাম। এসব কিছুই আমার ব্যবসার বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
কয়েক বছর আগেও কল্পনা করিনি আমি আজকের এ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। একদম শূন্য থেকে শুরু করে আমি আজকের স্থানে এসেছি। আমার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমাকে আমার সারাজীবনের সঞ্চয়ও হারাতে হয়েছিল। তবে এখন আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে আমি একজন সুখী মানুষ। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে আমি বেশ সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করছি। আমি আমার বাকি জীবনটাও এইভাবে কাটিয়ে দিতে চাই।