Md. Robiul Islam Rubel, Rangpur
রুবেল ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফিডস
1,021 Views

আমি পড়াশুনা শেষ করার পরপরই চাকরিজীবন শুরু করি। একবছর আগে পর্যন্তও আমি একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে যুক্ত ছিলাম। ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমি সেখানে কর্মরত ছিলাম। এই পাঁচটা বছর আমার জন্য সহজ ছিল না কেননা আমার পোস্টিং নোয়াখালীতে ছিল যা আমার বাসা থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে ছিল। তাই আমাকে সম্পূর্ণরূপে সেখানে স্থানান্তর হতে হয়েছিল। কিন্তু করোনার প্রথম লকডাউনে সবকিছু বদলে যায়। আমি বাড়ি ফিরে আসি আর ভাবতে শুরু করি যে পরবর্তীতে আমার করনীয় কি।

সে ভাবনা থেকে আমি ২০২০ এর মাঝামাঝি সময়ে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেই। পোল্ট্রি ফার্ম এবং গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় আমি স্থানীয় বাজারে একটি ভেটেরিনারি শপ শুরু করি। তার পাশাপাশি আমি বাড়ির উঠানে এক হাজার মুরগির খামার তৈরি করি। এগুলো করতে যত খরচ হয়েছিল তার পুরটাই আমি বহন করেছিলাম কিন্তু সবকিছু গড়ে তুলতে আমার বাবা ও ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি ছিল। যখন আমি মুরগিগুলো বাজারে বিক্রি করা শুরু করলাম, তখন দেখতে পেলাম যে আমার আয় খুব বেশি না হলেও সঞ্চয় আগের তুলনায় বেশি হচ্ছিল। কারণ আমাকে বাসা ভাড়া, খাবার, ও যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছিল না। তাই আমি বুঝতে পারি যে আমি ভুল কোন সিদ্ধান্ত নেইনি।

আমার ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে অনেক আগে থেকেই জড়িত ছিলাম। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার জন্য অনুদান সংগ্রহ করতাম। আমার ব্যবসা শুরু করার অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিল মানুষের সেবা করা। চাকরিজীবন অনেক সময়ে একজন মানুষকে সীমাবদ্ধ করে তোলে, কিন্তু ব্যবসায় মানুষের মাঝে সেবা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আমার খামার থেকে আমি পুষ্টিকর খাবার সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার সাথে সাথে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করতে পারছি। তাই, আমি বিশ্বাস করি যে উদ্যোক্তা হয়ে আমি যে স্বাধীনতা পাচ্ছি তা আমি অন্য কোথাও পেতাম না।

সত্যি বলতে, করোনা মহামারীর কারণে আমার ব্যবসায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। এটা অবশ্যই বিধাতার অশেষ রহমত যে আমার বড় কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। বাজারের চাহিদা ও দামের পতনে যা ক্ষতি হয়েছে তা ইতিমধ্যে পুষিয়ে নিতে পেরেছি। করোনার প্রকোপের হাত থেকে জনসাধারণকে সচেতন করতে অনেক তরুণ-তরুণীদের সাথে কাজ করেছি। আমরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি এবং সবাইকে করোনামুক্ত থাকার নির্দেশনা দিয়েছি।

 ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমি অনেকগুলো পরিকল্পনা এবং প্রকল্প সাজিয়েছি যা আমি বাস্তবায়ন করতে চাই। আমি ইতিমধ্যে একটি নতুন পোল্ট্রি ফার্ম এবং একটি দুগ্ধ খামার তৈরির কাজ করছি। আমাদের অঞ্চলে ছাগলের চাহিদা থাকায় সেটি নিয়েও কাজ করা শুরু করেছি। আরেকটা বড় স্বপ্ন হল আমার বন্ধুদের সাথে একটি মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলা। লাইটক্যাসল পার্টনারস এবং ওয়ার্ল্ডফিশের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আমাকে মৎস্যচাষের ব্যপারে অনেককিছু জানতে সাহায্য করেছে। এই ধরনের সমর্থন ছাড়াও, আমি বিশ্বাস করি যে বাজারকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মূল্যের সঠিক নজরদারি অনেক বেশি প্রয়োজন। তার পাশাপাশি, নতুন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্যের বিষয়টাও সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানদের ভেবে দেখা উচিত। এগুলি অবশ্যই একটি সবুজ ভবিষ্যত গড়তে ও আমাদের অর্থনীতিতে আরও উদ্যোক্তা পেতে সহায়তা করবে।