Md. Nahidul Islam, Rajshahi
মৎস্যখাতের জগতে একজন ছাত্র উদ্যোক্তা
784 Views

শৈশব থেকেই, আমি এমন পরিবেশে বড় হয়েছি যেখানে অধিকাংশ মানুষই মৎস্য ও জলজ চাষের সাথে জড়িত ছিল। আমার দাদা থেকে শুরু করে আমার বাবা, সবাই জীবিকার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই কারণেই, আমার এই খাতের প্রতি ছোটবেলা থেকেই একটা টান কাজ করত এবং আমিও পূর্বপুরুষদের মতো একই পথে হাঁটতে চেয়েছিলাম। সে ভাবনা থেকেই পড়ালেখা শেষ করার আগেই মাছ চাষে যাত্রা শুরু করি। যদিও আমার ব্যবসার সবেমাত্র ৪ বছর হয়েছে, আমি ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছি।

যেহেতু আমি ২০১৬ সালে কেবলমাত্র কলেজে ছিলাম, আমার কাছে খুব বেশি পুঁজি ছিল না। তাই, আমার বাবা আমাকে আমার ব্যবসা শুরু করতে আর্থিক এবং মানসিকভাবে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। আমাদের এলাকায় জলজ চাষের খাত প্রসারিত হচ্ছিল, এবং সে কারণে আমার  একটি ভাল পুকুর ইজারা পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। আমি বেশি ঝুঁকি না নিয়ে অল্প পরিসরে সব শুরু করেছিলাম। আমার কাছে পোনা চাষ সবচেয়ে নিরাপদ পদক্ষেপ মনে হওয়ায় তা দিয়েই শুরু করি। আমি সকল সতর্কতা অবলম্বন করে ভালো উৎপাদন পাই এবং আমার ব্যবসায়িক যাত্রা সফলভাবে শুরু হয়।

প্রথম বছরের সাফল্যের পর, আমি কার্প মাছ এবং অন্যান্য কিছু মিশ্র জাতের চাষ শুরু করার জন্য আরও বড় একটি পুকুর ধার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এবারও উৎপাদন খুবই ভালো হওয়ায় আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এবং লাভের পরিমাণও আগের থেকে বেশি পাই। এটি আমাকে উৎপাদন বাড়াতে এবং অন্যান্য জাতগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য আরও উৎসাহ দেয়। কিন্তু, একটি ট্র্যাজেডির কারণে আমার পরিকল্পনা থমকে দাঁড়ায়।

পরের বছর, একটি পুকুর পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমি একজন জলজ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করেছি পুকুরে ওষুধ দেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আমার ওষুধ দিতে দেরি হয়ে গিয়েছিল আমার উৎপাদনের বড় একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়, এবং এটি আমার ব্যবসায় বড় আঘাত হানে। তবুও, অনেকটা ক্ষয়ক্ষতির পরেও আমি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি।

কোভিড -19 মহামারীটি দেশের বেশিরভাগ অংশে খুব মারাত্মকভাবে আঘাত করলেও, আমি কোনও উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হইনি। বাজারে সব মাছের দাম কমলেও পোনার চাহিদা ছিল বেশি। সেজন্য এটি আমার আয় বা লাভের পরিমাণ কমবেশি আগের মতোই ছিল। ২০২১ সালে, মাছের দাম আবার অনেকটাই আগের মতো হয়ে গেছে তাই লাভও একটু বেশি পাচ্ছি। তাই আমার ব্যবসার উপর এই মহামারী খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি।

অক্সফাম এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্স আমাকে মৎস্যখাত সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে বিস্তর সাহায্য করেছে। আমি খুবই কম বয়স থেকে এখাতে যুক্ত হওয়ায় আমার জন্য সকল ধরনের জ্ঞানই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন, আমি একটি দুগ্ধ খামার খোলার পরিকল্পনা করছি। এ বছর আমি কোনো পুকুর ইজারা নিতে পারিনি। তাই মাছ চাষের পাশাপাশি আমি একটি গরু ও কিনে রাখি। সামনে আশা করি সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাই, সর্বশক্তিমানের উপর আমার ভরসা রেখে, আমি আমার ভবিষ্যতের ভালো দিনগুলোর অপেক্ষা করছি।