শৈশব থেকেই আমি নানা বিষয়ে কৌতূহলী ছিলাম। তাই, আমি কখনও নতুন সুযোগে হাতছানি দিতে ভয় পাইনি। একজন মৎস্য উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে আমি আগে থেকে ভাবিনি। আমার মাছ চাষ শুরু করার অনুপ্রেরণা একজন ঘনিষ্ঠ বড়ভাইের কাছে থেকে এসেছিল। আমার পুকুরগুলোকে কাজে লাগিয়ে মানসম্পন্ন মাছ উৎপাদন করার পরামর্শ দেন তিনি। সেই ১৯৯০ সালের নেওয়া সিদ্ধান্ত আজও আমাকে এগিয়ে যাওয়ার মনোবল যোগায়।
সেই থেকে আমি ডুব দিলাম মাছের নীল জগতে। আমার নিজের একটি পুকুর ছিল এবং তার সাথে আরেকটি পুকুর লিজ নিয়েছিলাম মাছ চাষের জন্য। শুরুতে, আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি, এবং সেই কারণেই আমি শুধুমাত্র পাঙ্গাস দিয়ে আমার যাত্রা শুরু করি। আমার উদ্দেশ্য ছিল ২০-২২ দিন লালন-পালন করে পোনা হিসেবে বিক্রি করা। অবাক ব্যাপার হল, প্রথমবারেই আমার পোনার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২,০০,০০০। সেটা বিক্রি করে আমি প্রায় ১,০০,০০০ টাকা পেয়েছিলাম। আমি তখনি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার জন্য মাছ উৎপাদন এবং চাষ অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক।
প্রথমথেকেই এতো ইতিবাচক ফলাফল পেয়ে আমি উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার কথা চিন্তা করলাম। তাই, আমি আমার পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের বাচ্চা ছাড়তে শুরু করি। আমার এই সিদ্ধান্ত আমাকে নতুন সকল পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমার উৎপাদনও বাড়িয়ে দিয়েছে। যখন পোনাগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়, তখন আমি নিজের জন্য একটি অংশ রেখে বাকি অংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেই। আমার মজুদ করা অংশ থেকে আমার পরিবারের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয় আবার কিছু অংশ আমি পরবর্তীতে চাষের কাজেও লাগাতে পারি। এইভাবে, আমি আমার ব্যবসায় পুনঃবিনিয়োগ করার জন্য যথেষ্ট মুনাফার পাশাপাশি তাজা মাছ থেকে পুষ্টিগুণ পেয়ে থাকি।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের সকল ধরনের নতুন কলাকৌশল ও সরঞ্জামের সাথে পরিচিতি ঘটল। সরকার পক্ষ থেকে আমাদের মতো মৎস্য উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল যেন আমরা নতুন অনেক কিছু শিখতে পারি। এই ক্ষেত্রে ৩০ বছরেরও বেশি যুক্ত থাকার কারণে অনেক প্রোগ্রাম, সেমিনারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ডফিশ এবং লাইটক্যাসল পার্টনারদের দ্বারা আয়োজিত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি আমার কাছে সবসময় মনে থাকবে। তারা আমাকে কিভাবে আরও নিপুণতার সাথে চাষাবাদ করতে হয় তা বুঝতে সহায়তা করেছে। তাদের পুরো আলোচনাটি ছিল খুবই সময়োপযোগী এবং বাস্তবধর্মী।
কোন প্রথাগত দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও আমার কখনও বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। ব্যবসার সবকিছু ২০২০ সাল পর্যন্ত খুব ভালভাবেই চলছিল। করোনা মহামারী অনেকদিক থেকে আমাদেরকে আঘাত করে। বাজারে মাছের দাম কমে যাওয়ায় আমার ব্যবসায় ক্ষতি হতে থাকে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমার কিছু পুকুরের উৎপাদন অনেক বেশি হয়। আমার ৩/৪ টা পুকুরের টেংরা মাছের চাষ অনেক ভালো হয় আর টেংরার চাহিদা ও বাজারে থাকায় আমার এইদিক থেকে অনেক লাভ হয়েছিল। আমি তাই আমার এলাকার তরুণ ব্যবসায়ীদেরকে উৎসাহ দিয়েছিলাম যেন তারাও টেংরা চাষ করে লাভবান হতে পারে।
এখন আমার লক্ষ্য ধান ও সবজি চাষে বেশি মনোযোগ দেওয়া। কোভিড পরিস্থিতির কারণে আমার ক্ষেতি চাষাবাদ থেকে সরে আসতে হয়েছিল কিন্তু এখন আবার সব নতুন করে শুরু করার সুযোগ আছে বলে মনে করি। আবাদি জমি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আমি আমার পুকুরের সংখ্যাও বাড়ানোর কথা ভাবছি। বিধাতার উপরে ভরসা রেখে আমি আমার পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি।