ঢাকার বৈচিত্র্যময় পরিবেশ আমাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছে নতুন কোন বিষয়ে জানার ও তা নিয়ে কাজ করার। আমার কখনই প্রথাগত চাকরি করার ইচ্ছা ছিল না। তাই, ২০০৫ সালে আমি আমার প্রথম বুটিক ব্যবসা শুরু করি। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি পদক্ষেপ ছিল। কিছু বছর পরে, আমি একটি অন-ডিমান্ড ফুড চেইন যুক্ত করে আমার ব্যবসা আরও বড় করার লক্ষ্য নিয়ে কিছু বন্ধুদের সাথে, আমি ফিস্টহাউস প্রাইভেট লিমিটেড শুরু করি।
অন্য সব উদ্যোক্তার মতো, আমার প্রথম কয়েকটি বছর কেটে যায় ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে পরিচিত হতে। যেহেতু আমার লক্ষ্য ছিল কর্পোরেট অফিসগুলোকে টার্গেট করে আমার ব্যবসা গড়ে তোলা, তাই আমি খাবারের নির্ভরযোগ্যতা ও স্বাদের বিষয়টা সবসময় ঠিক রাখি। আমি সবসময় বাজারের ভালো পণ্যগুলো আমার মেন্যু তৈরির জন্য বাছাই করি। আমার এই মানসিকতা একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে অনেক সাহায্য করেছে।
আমি নিজেই সকলধরনের পণ্য ও কাঁচামালের গুণগতমান সঠিকভাবে নির্ধারিত করে থাকি। সেসব নির্ভেজাল ও প্রাকৃতিক পণ্যকে সুস্বাদু মেন্যুতে পরিণত করতে আমার সাথে ৪ জন প্রধান শেফসহ সু শেফ কাজ করে। তারা প্রায় সকল ধরনের রান্নায় সমান পারদর্শী। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে ডেলিভারি নিশ্চিত করার জন্য আমি ফুল টাইম ডেলিভারি পারসনও রেখেছি। আমরা ব্যবসার সকলদিক নিপুণতার সাথে পর্যালোচনা করে থাকি যেন অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যা দেখা না দেয়।
আমার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠানকে একটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ডে পরিণত করা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের আস্থা অর্জন করা। আশ্চর্যজনক বিষয় হল যে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তা এবং কর্পোরেশনের সাথে আমার ক্রমাগত যোগাযোগের কারণে আমরা অনেকের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পেরেছি। লাইটক্যাসল পার্টনার্স আয়োজিত বিজনেস ফেয়ার আমাকে একইভাবে অনেক কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে আরও দক্ষতা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই এসব প্রোগ্রাম এবং সেমিনারগুলোতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে।
একটি ব্যবসা নতুন করে গড়ে তোলা ও তা পরিচালনা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। তার উপরে উদ্যোক্তাদের প্রায়ই ঋণ সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমাকেও তা মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমার তেমন কোন জমিজমা বা বন্ধকী না থাকায় এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ঋণ না নিয়েই আমার ব্যবাসা চালিয়ে যাচ্ছি। কোভিড – ১৯ এর ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের জন্য আরও হুমকিস্বরূপ ছিল। সকল কর্পোরেট অফিস একটানা অনেক মাস ধরে বন্ধ ছিল। কিন্তু আমি কোনো কর্মচারী ছাটাই করিনি যদিও আমার অনেক ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে যেতে হয়েছিল। পরবর্তীতে, এই লকডাউন আমাকে অনলাইনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার সুযোগ এনে দেয়। আমরা বিভিন্ন সেট মেন্যু অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর মাধ্যমে প্রমোট করে অনেক ভালো সাড়া পাই। বর্তমানে পরিস্থিতি আমার স্বাভাবিক হওয়ায় আবার কর্পোরেট অফিসগুলোর ক্যাটারিং সার্ভিস ভালোভাবে চলছে।
আমাদের সুস্বাদু খাদ্য সকলে যেন সামনাসামনি উপভোগ করতে পারে সেজন্য আমি ইতিমধ্যে জাইকা নামে একটি রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা করেছি। এটির কাজ প্রায় শেষের দিকে এবং আমরা আশা করছি আগামীমাস থেকে সম্পূর্ণরুপে আমরা চালু করতে পারব। আমি প্রার্থনা করি যেন এভাবেই সকলধরনের খাদ্যরসিককে আমাদের বৈচিত্র্যময় খাবার দিয়ে খুশি প্রদান করে যেতে পারি অনেকটা সময় ধরে।
ফিস্টহাউস প্রাইভেট লিমিটেড – একজন নিবেদিতপ্রাণ নারী উদ্যোক্তার খাদ্য ক্যাটারিং ব্যবসায় সফলতা অর্জনের গল্প।