Pradeep Moholdar, Khulna
পাপড়ি মৎস্য খামার
1,242 Views

আমি খুলনায় আমার এলাকার আশেপাশে জলজ খামার দেখে বড় হয়েছি। আমাদেরও বাড়ির পাশে কিছু জমি ও পুকুর আছে। সাদা মাছ এবং গলদা চিংড়ি চাষের জন্য সাধারণত পুকুরগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মৎস্যচাষে যা যা প্রাথমিক জ্ঞান প্রয়োজন তা আমি বাবার কাছে থেকেই লাভ করি। তার সাথে কাজ শিখতে শিখতে নিজের উদ্যোগে কয়েকটি পুকুর নিয়ে আমার খামার তৈরি করার কথা ভাবি। পরবর্তীতে সেই ভাবনা থেকেই পাপড়ি মৎস্য খামারের সূচনা।

 ২০১৮ সালে, আমি বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করার কথা চিন্তা করি। যেহেতু আমার বাবাও বাগদা চাষ করেননি, তাই এটি আমার জন্য অপেক্ষাকৃত নতুন ছিল। কিন্তু, আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম নতুন কিছু শুরু করার। তাই, কয়েকটা ব্যাংক থেকে আমি মোট ৪,৫০,০০০ টাকার মতো ঋণ নিই। ঐ টাকা ব্যবহার করে আমি পুকুরের গভীরতা বাড়াই, একটি জেনারেটর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনি। আমি প্রথমদিন থেকেই আমার সবটুকু শ্রম মাছ চাষের পেছনে দিতে শুরু করি।

কিন্তু, আমার অনভিজ্ঞতার কারণে আমাকে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। পুকুরের আশেপাশে আম গাছ ছিল এবং পাতাগুলো প্রায়ই পানির ওপর পড়ত। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করতাম তা সরিয়ে পুকুর পরিষ্কার রাখার। তবুও অনেক পাতা জমে পানিতে গ্যাস সৃষ্টি করে ফেলে যার কারণে আমার অনেক মাছ মারা যায়। এভাবেই আমার পুরো বিনিয়োগের অনেকটা অংশ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, আমি বিশ্বাসী ছিলাম যে এই কষ্টগুলো বেশিদিন স্থায়ী হবে না।

এরপরের বছরে, আমার বাগদা চিংড়ির উৎপাদন সন্তোষজনক ছিল। আমি আমার আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি এবং আমার জলচাষ উদ্যোগে কোন বড় ঝুঁকির মুখোমুখি হইনি। আমার প্রায় ৭৯০ কেজির ব্যাপক উৎপাদন হয়। আমি মোট উৎপাদন থেকে প্রায় ৪,৫০,০০০ টাকা লাভ করি। মাছের ভাল সংখ্যা এবং দামের কারণে, আমি আমার যাত্রা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।

কিন্তু আবার, ২০২০ সালে, করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছু জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আমি আমার মৎস্য চাষ ছাড়াও অন্য কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিলাম যেখান থেকে আশানুরূপ ফল পাইনি। যার কারণে আমাকে ঐবছরের জন্য মাছ চাষ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। সেসময়ে বাজারের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছিল। চাষিরা অনেক কম দামে তাদের মাছ বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছিল।

বর্তমান বছরে আমি আবার আশার আলো ফিরে পাচ্ছি। এখন বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ও মাছের চাহিদাও বাড়ছে। যদিও আমি এখনও পুকুরে মাছ চাষ করা শুরু করিনি, আশা করছি ২০২২ এর জানুয়ারী থেকেই পুরোদমে আমার কার্যক্রম শুরু করব।

আমি লাইটকাস্টল পার্টনার্সের আয়োজনে যশোরে তাদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম। যদিও অভিজ্ঞতাটি কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থায়ী হয়েছিল, আমি তাদের গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের জন্য এগিয়ে আসার প্রকল্পকে সাদুবাদ জানাই। আমার ভবিষ্যতের জন্য এখনও বড় কিছু ভাবছি না। আমি শুধু চাই যেন আমি আমার পরিবারের সাথে সুখেশান্তিতে বাকি জীবন কাটাতে পারি। আমি প্রার্থনা করি যেন আমার মেয়ের স্বপ্নগুলো পূরণ হয় এবং আমার বাবা আমাকে নিয়ে গর্বিত অনুভব করতে পারেন।