আমাদের দেশের একটি খুব পুরোনো ধারণা হল যে একজন ব্যবসায়ীর জীবনে অবসর অনেক বেশি থাকে। কিন্তু, বিষয়টি একেবারেই উল্টো। আমি জানতাম যে, একজন উদ্যোক্তার জীবন সবদিক থেকেই চাকরিজীবীর তুলনায় কঠিন। তাও আমার অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজের একটি ব্যবসা গড়ে তোলার। সেই আবেগের জায়গা থেকেই ডায়াগনস্টিশিয়ান হিসাবে আমার আগের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৯ সালে একটি ফুটওয়্যার কোম্পানির সূচনা করি।
আমার উদ্যোগে যে অনেক ঝুঁকি ছিল তা আমার কাছে অজানা ছিল না। কিন্তু এর মাঝেও আমি অনেক সহযোগী পেয়েছি যারা আমার সাথে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই, আমি ও আমার কয়েকজন পার্টনারের হাত ধরে, কোন ঋণ ছাড়াই ডায়মন্ড ফুটওয়্যারের যাত্রা শুরু করি। আমরা মূলত বিভিন্ন ধরনের জুতা ও স্যান্ডেল তৈরি করে থাকি আমাদের কারখানায়। প্রথমদিকে আমাদের খরচ অনেক বেশি হচ্ছিল কেননা আমরা তখনও বাজারে বড় জায়গা করে নিতে পারিনি। কিন্তু আমরা লাভের জন্য খুব একটা চিন্তিত ছিলাম না কারণ গ্রাহকরা আস্তে আস্তে আমাদের পণ্য কেনা শুরু করলে ক্ষতি পুষিয়ে যেত। কিন্তু এর মধ্যেই করোনা মহামারী চলে আসে।
আমরা সবাই জানি করোনা কিভাবে সকল স্তরের মানুষকে নির্মমভাবে আঘাত করেছে। আমরাও তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে পারিনি। আমাদের কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে এবং লকডাউনের কারণে বিক্রি প্রায় শুন্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো। যখন আমরা উৎপাদন শুরু করার একটু সুযোগ পেলাম তখন আবার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসে। এভাবেই খুবই ন্যূনতম বিক্রি করেই আমাদের চলতে হয়েছে। সরকার আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরকে কিছু ভর্তুকি দিয়েছে কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না।
আমরা করোনার প্রকোপে একদম দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। এমতাবস্থায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। দেশের একটি নামী ব্যাংকের সাথে আমাদের কথা হয় এবং তারা আমাদের আশ্বস্ত করে যে আমরা ব্যবসায়িক ঋণ পেয়ে যাব। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা বিনা কারনেই ঋণ বাতিল করে দেয় যার কারণে আমরা উপযুক্ত পরিমাণে উৎপাদন করতে পারিনি। তাও, আমাদের সবটুকু উজাড় করে আমরা ব্যবসা চালিয়ে গেছি করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পার করে গিয়েছি।
আমরা যখন করোনার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় খুঁজছিলাম, তখন আমরা লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও বি-স্কিলফুলের ব্যাপারে অবগত হই। তাদের কর্মশালা এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করতে এসএমই-কে শিক্ষিত করার যে উদ্যোগ তা আমাদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমরা যদিও এখনও খুবই দুর্বল পর্যায়ে অবস্থান করছি, কিন্তু তাও আশা করি যেন খুব শিগ্রই আমরা পুরোদমে ব্যবসা শুরু করতে পারি।