Morsalina Akhtar, Rangpur
একটি আদর্শ গরুর খামার তৈরির গল্প
1,034 Views

আমি আসলে কখনই ভাবিনি যে আমি কোনও ধরণের ব্যবসায় নামব। কিন্তু জীবন মানেই শেখা এবং নতুন অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। এভাবে হঠাৎ করেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালে আমি আমার শাশুড়ির গবাদি পশুর ব্যবসায় জড়িত হই। যদিও তিনি আমার আগে পুরো ব্যবসা নিজেই দেখাশোনা করতেন, তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই, সে দায়িত্ব পালন করার জন্য আমি প্রস্তুত হতে থাকি।

আমার লক্ষ্য ছিল গবাদি পশু দিয়ে খামারটিকে আরও বড় করা এবং আরও কিছু যুক্ত করা। কিন্তু, আমার ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা কম ছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে আমি আরডিআরএসের সাথে যুক্ত হই। তাদের প্রশিক্ষণ আমাকে ব্যবসায়িকদিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ করে তুলেছে। যেহেতু আমার শাশুড়িকে এতদিন ধরে কাজ করতে দেখার পরে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা ছিল, আমি প্রশিক্ষণটিকে কাজে লাগাতে পেরেছি। এছাড়াও, আমি আমার ব্যবসার অধ্যয়ন এবং গবেষণার জন্য অনেক সময় নিয়োজিত করেছি। আমি জানতাম আমার নিজের সাথে নরম হওয়ার কোন জায়গা নেই। এজন্য আমি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি।

ব্যবসা শুরু করার আগে আমি একটি ছোট পোল্ট্রি ফার্মও পরিচালনা করতাম। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্টের জায়গা এইটাই ছিল যে আমার স্বামী দুবাই থাকত। তার কাজের জন্য সে দেশে আসার সুযোগ পেত না। তার অনুপস্থিতি আমার জন্য হতাশাজনক ছিল কিন্তু আমি তাও ভেঙে পড়িনি। আমি পরের দুই বছর আমার গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির ব্যবসার সাথে উন্নতি করতে থাকি। কিন্তু, ২০২০ সালের শুরু থেকেই আমার জীবন আবার ধূসরময় হতে থাকে।

২০২০ সালে, মহামারীর কারণে আমার স্বামী তার চাকরি হারিয়ে ফেলে। এটা আমাদের দুইজনের জন্যই ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যদিও সে দেশে এসে আমার সাথে ব্যবসায় যোগদান করে কিন্তু তখন বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। লকডাউন আমাদের কোনো মুরগি বিক্রি করতে দেয়নি। তাছাড়া পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগ না পাওয়ায় গবাদিপশুর ব্যবসাও চালানো কষ্টকর হয়ে উঠছিল। দৈনন্দিন পণ্যের দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছিল। আমরা ভাবতে পারিনি যে পরিস্থিতি কয়েক মাস ধরে চলতে থাকবে। আমাদের কিছু পুঁজি দরকার ছিল নাহলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হতো। তাই আমরা কয়েকটি গবাদি পশু বিক্রি করে দেই যেন আমরা বেঁচে থাকতে পারি।

আমরা যা অনুমান করতে পারিনি তা হল আমার শাশুড়ির ওপারে চলে যাওয়া। আমরা অনেক ভেঙে পড়েছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না যে কি হচ্ছে। এই ঘটনা এমন সময়ে আমদেরকে আঘাত হানে যখন আমরা ব্যবসা ঠিকমতো চালাতে পারছিলাম না। কিন্তু, আমরা জানতাম যে এই ব্যবসা ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই। তাই আমরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাতে থাকি এবং কয়েক মাস পরে তা শোধ করে দেই।

লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও অক্সফামের সাথে কাজ করার মাধমে আমরা করোনার ক্ষতি থেকে বের হয়ে আসার উপায় সম্পর্কে জানতে পারি। তাছাড়া, আমরা তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়ে আনন্দিত। এখন আমরা চাই যেন আমরা এই ব্যবসা ধরে রাখতে পারি এবং আরও বড় করতে পারি। আমার স্বামী কৃষিজমি গুলো কাজে লাগিয়ে ভুট্টা, গম ইত্যাদি চাষের দিকে যেতে চায়। তার জন্য সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৪ লাখের মতো বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু, আপাতত আমরা ব্যবসাকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আনতে চাই।