একজন নারীর জীবনে সংগ্রাম এবং বাঁধার কোন অন্ত নেই। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমার বিয়ের পরে, আমি অধিকাংশ নারীর মতোই পরিবার ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার স্বামী পরিবারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত তা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু, সে খুশি বেশিদিন স্থায়ী হল না। ২০১৯ সালে সে গুরতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার পার্থিবজীবনের যাত্রা কিছুদিন পরেই শেষ হয়ে গেল। আমার সামনে পড়ে থাকল এক অজানা ভবিষ্যৎ এবং আমার দুই ছেলে। কিন্তু, আমি জীবন-সংগ্রামে হার না মেনে নিজের একটি ব্যবসা শুরু করলাম। আমি আসমা বেগম এবং এটি আমার একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।
আমি সত্যি বলতে আমার স্বামীর মৃত্যুর শোক পালন করার সময়ও ঠিকমতো পাইনি কারণ আমার দুই ছেলের পড়াশোনা এখনও বাকি। আমার কোথাও যাওয়ার ছিল না। কিন্তু, এরকম কঠিন সময়ে লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও ওয়ার্ল্ডফিশ আমাকে অনেক সাহায্য করেছে আমার ব্যবসা দাঁড়া করাতে। আমি এখনও তাদের সাথে প্রতিনিয়ত কাজ করি এবং যোগাযোগ রাখি। তাদের সহায়তা ছাড়া আমার পক্ষে এতদূর পৌঁছানো অনেক কষ্টকর হয়ে উঠত। তাদের পরামর্শমতে, আমি আমার দুই পুকুরে কার্পের পোনা ছাড়ি। উৎপাদন নেহাতই মন্দ ছিল না কিন্তু করোনা আমাকে দ্বিতীয় দফা বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিল।
আমার এলাকার সিংহভাগ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী একেবারেই অজ্ঞাত ছিল এধরনের পরিস্থিতি নিয়ে কারণ কেউ তাদের জীবনে এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি। আমার খুব দামে সব মাছ বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার আরও কিছু করতে হবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। তাই আমি আমার পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার করে সেখানে শাক-সবজির বাগান করি। এভাবে আমি আমার অর্থ উপার্জনের জন্য আরও মাধ্যম তৈরি করতে সক্ষম হই। সে সময়ে আমার খরচ অনেক বেশি হচ্ছিল এবং ওয়ার্ল্ডফিশ আমাকে ঋণ নিতে সহায়তা করে। আমি এলাকার আরও নারী উদ্যোক্তাকে আগ্রহী করে তুলি যেন তারাও নতুন সব পরিকল্পনা আয়ত্ত করার চেষ্টা করে।
পরের বছর, আমি আমার সর্বশ দিয়ে দেই পুকুর ও বাগান ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য। উভয় থেকে খুবই ভালো উৎপাদন আসে এবং আমার মুনাফা অনেক বেড়ে যায় আগের বছরের তুলনায়। এতদিন পরে আমি আশার আলো দেখতে পাই। আমরা এলাকার প্রায় ২৫ জন নারী উদ্যোক্তা মিলে একটি সংগঠন তৈরি করি যেখানে আমরা বিভিন্ন চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করে থাকি। এই উদ্যোগ আমাদের সবাইকে একসাথে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
যদিও আমার সকল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তগুলো থেকে ফলাফল ভালো আসছে, আমার মতো নারী উদ্যোক্তার জন্য এই যাত্রা কখনই সহজ নয়। ঋণ নেওয়ার সময়েও অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আমি যে ঋণটি নিয়েছিলাম সেটার সুদের হার অনেক বেশি ছিল। আমার পক্ষে প্রতিবার এধরনের ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। আমার মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার যেটি দরকার সেটি হল কম সুদে ঋণ বা কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা। আমি যদি সঠিক সুযোগ পাই তাহলে আমি এলাকার নারী উদ্যোক্তার জন্য বড়কিছু করতে চাই। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখে, আমি আমার পরিবার ও সমাজের জন্য সারাজীবন কাজ করে যেতে চাই।