Md. Nasir Uddin, Rajshahi
নাসির উদ্দিনের গল্প
1,271 Views

২০১৭ সালে আমি উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করি। তার আগে, আমি আমার বাবার সাথে কাজ করতাম যাতে তাকে তার ব্যবসায় সাহায্য করতে পারি। সেই সময় থেকে, আমি বুঝেছিলাম যে ব্যবসায়িক জীবনকে আমি বেছে নিতে চাই এবং এই পেশাতে আমি আমার সবটুকু শ্রম দিতে চাই। কিন্তু আমার নিজের একটি উদ্যোগ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। তাই, আমি কম বিনিয়োগের মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায় সে সম্পর্কে ভাবতে শুরু করলাম। তখনই অনলাইন ব্যবসার চিন্তা আমার মাথায় আসে। যেহেতু এক্ষেত্রে আমার সশরীরে কোন দোকান দিতে হবে না, তাই আমার অর্থ সীমিত পরিমাণে প্রয়োজন হবে। তাছাড়া এটা আমাকে আমার বাড়ি থেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিবে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভাল পন্থা বলে মনে হয়েছিল। তাই, আমি আম এবং গুড় বিক্রি করে আমার অনলাইন ব্যবসা শুরু করলাম কারণ এগুলো রাজশাহীতে খুব সহজেই পাওয়া যায়।

আমার অনলাইন ব্যবসা থেকে, আমি প্রায় ১৬,০০০-১৭,০০০ টাকা মুনাফা লাভ করি। এরপরে আমি চিন্তা করলাম যে এই অর্থ যদি এখন আমি বড় জায়গায় বিনিয়োগ করি তাহলে আমার আয়ের পথ প্রসারিত হবে। এই চিন্তা থেকেই আমার মাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়া। আমি ৬০০০ টাকা দিয়ে ১ বছরের জন্য একটি পুকুর ধার নিই। প্রায় ৬ কেজির মতো মাছের পোনা সেখানে চাষ করা শুরু করি। ১ বছর ধরে পোনাগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে বড় করতে থাকার পাশাপাশি আমের মৌসুমে আমের ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকি। যখন পোনাগুলো বড় মাছে পরিণত হল, তখন স্থানীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে ৭৬,০০০ টাকা মুনাফা লাভ করি।

আমি আবারও আমার মুনাফা বিনিয়োগের কথা ভাবলাম। সেই ভাবনা থেকেই আমি ১৫ শতকের একটা পুকুর ধার নিয়ে তাতে পোনা ছাড়ি। কিন্তু, এবার ভাগ্য আমার সহায় ছিল না। তাছাড়া, আমি এই ব্যবসায় অনভিজ্ঞ ছিলাম। যার ফলে আমার অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হল। মাছের নিয়মিত খাওয়ানোর কারণে, পুকুরে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়েছিল যা আমার প্রায় ৬০% মাছ নিশ্চিহ্ন করেছিল। এই ক্ষতি সামলানো আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকলাম। আমি কৃতজ্ঞ যে আমার কোন ক্ষতি হয়নি, যদিও লাভের পরিমাণও সামান্য ছিল আমি আমার ভুল থেকে শিখেছি এবং তারপর থেকে আমি আমার এলাকার অভিজ্ঞ মৎস্যচাষ উদ্যোক্তাদের শরণাপন্ন হই । তাদের পরামর্শ আমাকে আমার ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে অনেক সাহায্য করেছে।

উপরন্তু, মহামারী আমার জন্য আরেকটি বিশাল প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। লকডাউনের কারণে দ্রব্যমূল্য অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হঠাৎ দাম বৃদ্ধির কারণে আমি মাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে অপারগ হই। এইভাবে, আমি তাদের বেশ কিছু সময়ের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারিনি। আমার মাছের বৃদ্ধি এই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এই মুহূর্তে, আমি আমার মাছ শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু সারা দেশে আমার মাছ বিতরণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। তার জন্য, আমি পুকুর কিনে তাতে আরও মাছচাষ করে আমার ব্যবসা প্রসারিত করতে চাই। অক্সফাম এবং লাইটকাস্টল পার্টনারদের ধন্যবাদ তাদের প্রশিক্ষণ সেশনে আমাকে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং কঠোর পর্যালোচনার পরে আমাকে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। আমি বিশ্বাস করি যদি আমি আমার স্বপ্নের জন্য কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাই, সাফল্য একদিন আসবেই। নিজের উপর এই বিশ্বাস রেখে, আমি আমার ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।