জীবন খুবই বৈচিত্র্যময়, তার সমস্ত রহস্য ও সম্ভাবনাকে সাথে নিয়ে। কিভাবে একটা বিষয় অন্য বিষয়কে প্রভাবিত করে এবং জীবনের রহস্য উন্মোচিত হয়, তা দেখতে আমার ভালো লাগে। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রাও একটি অজানা অভিযানের থেকে কম কিছু ছিল না। আমি কখনও উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা করিনি। তার কারণ এই না যে ব্যবসা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। মৎস্য ব্যবসা সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছোটবেলা থেকেই ছিল কারণ আমার বাবা এই সেক্টরের সাথেই তার সারাজীবন ধরে যুক্ত আছেন, কিন্তু আমি কখনই ভাবিনি যে আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা আমি এতটা উপভোগ করব। যদিও আমার পড়াশোনা এখনও বাকি, আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আমি আমার বাকি জীবন এই কাজের সাথেই বেড়ে উঠতে চাই।
আগে যেহেতু আমার মাছ চাষ সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই আমি আমার বাবার সাথে অনেক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতাম। আমাদের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা একটি প্রশিক্ষণ অধিবেশনের আয়োজন করেছিলেন যা এই ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য প্রাথমিক কৌশল সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু, আমাকে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা যোগায় অক্সফাম এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্স। আমি তাদের আবাসিক প্রশিক্ষণ থেকে ব্যবসার সকলবিষয় যেমনঃ ব্যবস্থাপনা, হিসাব-নিকাশ, মার্কেটিং, ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক বিস্তারিতভাবে জানতে পারি। তাদের এত আন্তরিক সহায়তা আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে এবং ২০১৯ এ আমি নিজের একক প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।
আমি আমার বাবার সাথে পারিবারিক খামার ও পুকুর পরিচালনার করার পাশাপাশি নিজের একটি পুকুর নিই। আমার বাবা আমাকে শুরুথেকেই সবধরনের সাহায্য করেছেন এবং তার সহায়তা বাদে আমি কখনও এতদূর আসতে পারতাম না। আমি তার পরামর্শ মোতাবেক প্রথমে কার্পজাতীয় মাছের পোনা দিয়ে শুরু করি। কিছু মাস পরেই আমি অনেক ভালো ফলাফল লাভ করি। আমি যে পরিমাণ উৎপাদন ও মুনাফা পেয়েছি তা আমার যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ অনুযায়ী অসাধারণ ছিল। তাই আমি অনেক উৎকণ্ঠা ও আশা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে শুরু করি।
আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় করোনা মহামারী। মাছের চাহিদা কমতে অনবরত কমতে শুরু করে এবং আমরা এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারিনি। মৃত্যুহার বৃদ্ধি, লকডাউন, সীমিত পরিবহণ, এই সমস্ত কিছু একসাথে মোকাবেলা করা খুব বেশি কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। মহামারীর আগে, আমার ব্যবসা থেকে লাভের অংশ প্রায় ২০-২৫% ছিল, কিন্তু গত দেড় বছরে, আমি কেবল লোকসানের মুখ দেখেছি। সরকারের পক্ষ থেকেও আমাদের মতো মৎস্যচাষিরা খুব বেশি সাহায্য পাইনি। কিন্তু এই ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। তাই, আমি আমার বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবং এখন যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ ভাক্সিন নিয়ে ফেলেছে এবং বাজার ও আগের মতো হচ্ছে, আমি এক নতুন আশা বুকে নিয়ে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখছি।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা এখনও বাকি আছে। আমি এখনও জানি না যে আমি মাস্টার্সের জন্য চেষ্টা করব কিনা, কিন্তু একটা বিষয় আমি আমার ব্যবসায়িক দক্ষতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী। তাই আমি যা শুরু করেছি তা চালিয়ে যেতে চাই এবং আমার ব্যবসাকে কৃষিক্ষেত্রের সকলখাতে সম্প্রসারিত করতে চাই। আমি বর্তমানে আমাদের পণ্যগুলো আরও ভালোভাবে মার্কেটিং করার সুযোগ খুঁজছি যা আমাদের মতো ক্ষুদ্র মৎস্যব্যবসায়ীদেরকে ন্যায্য মূল্য পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, মহামারীর কারণে গত বছরে আমি গরুর খামার খুলতে পারিনি। আশা করি, সামনের বছরে আমি আমার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে পরিণত করতে পারব।