Akhterun Nahar
একজন অভিজ্ঞ মহিলা উদ্যোক্তার গল্প
963 Views

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় ১২ বছর আগে। ২০০৯ সালে, আমি আমার বাবার পোল্ট্রি এবং মাছের ব্যবসার দেখাশোনা করার মাধ্যমে শুরু করি। ২০১২ সালে আমার বিয়ের পরে আমার স্বামী আমাকে ব্যবসার ক্ষেত্র আরও বড় করতে সাহায্য করে। তাই, ২০১৪ সাল থেকে, আমি একই সাথে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি এবং মাছচাষ করতে থাকি এবং সফলভাবে সব ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকি।  এর মাঝে আমি কিছু সময় স্বেচ্ছাসেবী চাকরিও করেছি। করোনা আসার আগে আমরা অনেক আনন্দিত ছিলাম যে আমাদের ব্যবসা এতদূর এগিয়ে গিয়েছে। কেননা আমরা ৩ টি আলাদা বাজারে আমাদের পণ্য দিতে পারছিলাম এবং ভালো উপার্জনও আসছিল।

তবে কোভিড-১৯ আসার সাথে সাথে, আমরা খামার পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি হতে শুরু করে। পাশাপাশি বাজারের চাহিদা ও দাম দুইটাই কমে যেতে থাকে। যার ফলে আমরা সার্বিকভাবে ক্ষয়গ্রস্থ হতে থাকি। একইসাথে, লকডাউনের মধ্যে বাজারে আমাদের পণ্য বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছিল না কেননা কোন ভাবেই আমরা কোন পণ্য ক্রেতাদের কাছে নিয়ে যেতে পারছিলাম না। করোনার আগে, আমাদের সর্বমোট ২ টি গরু ও ৩ টি ষাঁড় ছিল। কিন্তু এত দুরবস্থার মধ্যে আমরা সবগুলো গবাদি পশুকে বেশিদিন রাখতে পারিনি। তখন আমাদের একান্ত বাধ্য হয়েই কিছু গবাদি পশু বিক্রি করে দিতে হয়েছে। তা নাহলে আমাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ঝুঁকির মধ্যে পরে যেত। এমনকি খামারের দুধ বিক্রি করতে না পারায় সব ফেলে দিতে হয়েছিল। পোল্ট্রি ব্যবসাও খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। প্রায় ৬০০র বেশি মুরগি মারা গিয়েছে যার বাজার মূল্য ৫০,০০০ টাকা ছিল।

আমাদের ব্যবসার অবস্থা দিনদিন খারাপের পথেই যাচ্ছিল, কিন্তু আমাদের কাছে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা জরুরি ছিল। এছাড়া আমাদের নিজেদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে যেত। আমরা তাই আমাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের কাছে থেকে সাহায্য নিই। আমার বাবা আমাদের কে ২,০০,০০ টাকা দেয় যা দিয়ে আমরা একটি পুকুর কিনে সেখান থেকে আবার নতুন করে মাছ চাষ করা শুরু করি। আমরা সরকারের তরফ থেকে করোনার জন্য আর্থিক সহায়তা পেয়েছি যা আমাদের জন্য সত্যিই আশীর্বাদের ন্যায় ছিল কেননা আমরা আশা করিনি যে আমরা কোন সাহায্য পাব। এভাবেই আমরা আমাদের ব্যবসা চালিয়ে গেছি। সবকিছুর মধ্যে আরডিআরএস আমাদের সর্বদিক থেকে সহায়তা করেছে। তারা আমদের গবাদি পশুর রোগ-বালাই সম্পর্কে জানতে পারি। এছাড়াও তারা সবসময় আমাদের সাহস জুগিয়ে গিয়েছে যেন আমরা হার না মানি। আমরা তাদের থেকেই লাইটক্যাসল পার্টনার্সের ব্যাপারে জানতে পারি।

ভবিষ্যতে আমরা আমাদের খামারের পরিধি আরও বড় করার পরিকল্পনা করছি। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ দরকার কারণ আমরা ইতিমধ্যেই আগের লোকসানে ভুগছি। তাই বড় অংকের বিনিয়োগ ছাড়া আমাদের পক্ষে নতুন করে সবকিছু শুরু করা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। আমরা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ হিসেবে অক্সফাম এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্সদের কাছ থেকে একটি গবাদি পশু পেয়েছি। এটি আমাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। আরও বিনিয়োগ পাওয়ার পরে, আমরা কিছু গবাদি পশু কেনার পরিকল্পনা করছি এবং সঠিকভাবে দুধ সংরক্ষণের উপর জোর দিই যাতে আমাদের এটিকে আর ফেলে দিতে না হয় ভালোভাবে সংরক্ষণ না করতে পারায়। আমরা জানি পরিবর্তনগুলি এত সহজে আসবে না। তাই আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজারে সেরা পণ্য নিয়ে আনার এবং আমাদের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা আরও শক্তভাবে গড়ে তোলার। আশা করি, খুব শীঘ্রই আমরা সুমধুর ফলাফল পাব এবং তার জন্যই আমাদের এতটা পথ ছুটে চলা।