উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমার মধ্যে সবসময়ই ছিল। পলাশবাড়ী ভেটেরিনারিতে প্রমোটার হিসেবে কাজ করার সময়, আমার মনে নিজের কিছু শুরু করার তাগিদ জাগে। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। নিজের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে একটি বড় ঝুঁকি ছিল আয়ের স্থিতিশীল উৎস হারানোর। তাছাড়া আমার পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর ছিল। নিজের জন্য ঝুঁকি নিতে আমি ভয় পেতাম না, তবে আমি আমার পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমার স্বপ্ন ও দায়িত্ববোধের মাঝে আমি দোটানায় ভুগছিলাম। নিদ্রাহীন কাটছিল আমার রাত। এরপর আরো বেশ কিছু জায়গায় কাজ করি। শেষমেষ ২০১৮ সালে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম নিজের ভেটেরিনারি ফার্মেসি চালু করব। চাকরিরত অবস্থায়ই শুরু করে দেই আমার ব্যবসা।
সত্যি বলতে, চাকরি করে পাশাপাশি ব্যবসা ও ব্যক্তিগত জীবন সামলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে দিনের ২৪ ঘণ্টা খুব কম সময় মনে হত। যদিও চাপ ছিল প্রচুর, নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে আমি উৎসাহী ছিলাম। যখন আমার খুব বেশি কষ্ট হত, আমি নিজেকে মনে করাতাম, বয়সের সাথে আমার কর্মশক্তি কমে যাবে। এখনের মত কাজ করার ক্ষমতা বা শক্তি কোনোটাই আমার থাকবেনা। আমার স্বপ্নগুলোও অপূর্ণ রয়ে যাবে। এই চিন্তাটাও আমার কাছে ছিল ভয়াবহ। আমি সারাজীবন অন্যের জন্য খেটে যেতে চাইনি। চাইনি শেষ জীবনে আমার কোন আক্ষেপ থাকুক।
চাকরির বেতন থেকে একটু একটু করে জমানো টাকা দিয়ে আমি ব্যবসা শুরু করি। শুরুতে পুঁজি ছিল ৪০,০০০ টাকা। এরপর থেকে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরুর দিকে আমি আমার বাসা থেকেই পণ্যগুলি বিক্রি করতাম। আমার কোনো অফিস বা দোকান নেওয়ার মত সামর্থ ছিলনা। পণ্যের প্রচারেও তেমন খরচ করতে হয়নি। আমার পণ্যের গুণগত মানের কারণেই ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী ছিলেন। স্থিতিশীলভাবে আমার ব্যবসা বেড়ে চলছিল।
ভেটেরিনারি কাজে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার নিজের ব্যবসা গড়ে তুলতে অনেক সহায়তা করে। ইতোমধ্যে এই কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে আমার সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে আমি বেশ কিছু দরকারি পরামর্শ ও উপদেশ পেয়েছি। এছাড়া তারা আমাকে সরবরাহকারী এবং ক্রেতার সন্ধান পেতেও সহায়তা করেছিল।
ভয়ঙ্কর মহামারি আঘাত হানার আগ পর্যন্ত আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। করোনা চলাকালীন আমার বিক্রি অনেক কমে যায়। প্রথম কিছু মাস আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মত ছিল। চোখের সামনে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেতে দেখছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল আমাকে কোন কঠিন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তার উপর, ব্যবসার ভাল অবস্থা থাকার কারণে আমি চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলাম। ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে আমাকে পথে নামতে হত। প্রতিনিয়ত ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছিলাম। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ২০২০ সালের শেষে, আস্তে আস্তে আমার ব্যবসা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের আইডিয়া প্রকল্পের অংশ থাকাকালীন আমি লাইটক্যাসল পার্টনার্স সম্পর্কে জানতে পারি। লাইটক্যাসল পার্টনার্সের সাথে আমার যাত্রাটি ছিল অত্যন্ত আনন্দের। তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। হিসাব-নিকাশের ধারণা থেকে শুরু করে ব্যবসা পরিচালনা সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান আহরণ করতে পেরেছি। এটি সত্যিই আমার জীবনে বেশ প্রভাব ফেলেছে।
আজ আমি অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছি। শুরুতে সবকিছুই ছিল অনিশ্চয়তায় ভরপুর। তবে আমি ভীত হইনি। আমার কষ্টের ফলাফল এখন আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আমার ভাবতে ভাল লাগে যে, প্রায় শূন্য হাতে শুরু করে আজ আমি একটি সফল ব্যবসার মালিক। আমি আমার ব্যবসাটি আরো বড় করে তোলার অনুপ্রেরণা পাই। বর্তমানে আমি আমার ব্যবসা প্রসারের জন্য প্রায় ৩-৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ যোগাড় করার চেষ্টা করছি। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এ অর্থ যোগাড় করতে পারলে আমার ব্যবসাটি নতুন দিগন্তে পৌঁছে যাবে।