অয়ন ফারনিচার গার্ডেন
অয়ন ফারনিচার গার্ডেন
856 Views

আমার ব্যবসায়িক যাত্রা স্নাতক পাস করার পরপরেই শুরু হয়নি। আমি প্রথমে একটি ফুল-টাইম চাকরির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেয়েছিলাম। তাই আমি গুলশানে একটি আসবাবপত্র উৎপাদনকারী কোম্পানিতে যোগদান করি। সেখানে আমি কারিগরি অভিজ্ঞতা লাভের পাশাপাশি বিভিন্ন বড় কোম্পানির সাথে কাজ করার ও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু চাকরি করা আমার লক্ষ্য ছিল না। আমার স্বপ্ন ছিল আমার কাজের মাধ্যমে রংপুর শহরে নতুন কিছু নিয়ে আসা। সেজন্য, প্রায় ১৫ বছরের নিরলস পরিশ্রমের পরে আমি আমার এন্টারপ্রাইজ শুরু করি।

আমি ছোট পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করি যেখানে আমার দোকান, কারখানা এবং লোকবল একসাথে অনেক বড় অর্ডার পূরণে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ছিল আগে বাজার পরখ করে চাহিদা বুঝতে পারা। আমি শোরুমে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ফারনিচার প্রদর্শন করে বাসাবাড়ির নিত্যদিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অনেক র্পোরেশন বা সংস্থার সাথেও কাজ করতে থাকি। আমি ভেবেছিলাম আমি খুব জলদি বাজারের একটি বড় অংশ দখল করতে সক্ষম হব। কিন্তু, বাস্তবতা সবসময় প্রত্যাশার সাথে মিলিত হয় না।

২০১৫ সালের শেষের দিকে আমার বড়ধরনের আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে কারণ আমি বাজারের পরিস্থিতি ঠিকমতো বুঝতে উঠতে পারিনি। আমার শুরুর যে ৮,০০,০০০-১০,০০,০০০ টাকার পুঁজি ছিল তার পুরটাই শেষ হয়ে আমার মাসে ১,০০,০০০ টাকার মতো ঘাটতি হচ্ছিল। ঢাকা থেকে আমি যেসব কারিগরদের নিয়ে এসেছিলাম তাদের বেতন দেওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আমি ২-৩ জন বাদে সব কর্মীদের ছাটাই করে নিজেই সকল কাজ করতে শুরু করি। আমি তখন রংপুর বাদেও আরও বিভিন্ন জেলার অর্ডার নিয়ে আমার ব্যবসাকে আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসি। যখন দেখলাম যে ব্যবসা পুনরায় লাভজনক হয়ে উঠছে তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমি ঠিক পথেই আগাচ্ছি।

ব্যবসা আবার দ্রুতবেগে যখন আগাতে শুরু করলো তখন আমি এটাকে আরও বড় করার সিদ্ধান্ত নিই। আমি নতুন প্রযুক্তি, জনবল যুক্ত করে আরও ভালোমানের পণ্য গ্রাহকদেরকে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে কারখানার জায়গা বৃদ্ধি করি। আমি বাজারে অনেক ভালো অবস্থান অর্জন করায় অর্ডারের দিক থেকে কোন সমস্যা আর দেখতে হয়নি। আমি নিজের ব্যবসার প্রতি আবার আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। কিন্তু, আমার সৌভাগ্য বেশিদিনের জন্য স্থায়ী হয়নি।

আসলে, এই বিগত দুইবছর আমার ও আমার ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ একটি সময় ছিল। আমার কারখানা ও দোকান একেবারে মূলসড়কলগ্ন হওয়ায় লকডাউনের কারণে আমি কোনভাবেই উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারিনি। একই কারণে আমার অন্যান্য জেলার অর্ডার ও একদম কমে গিয়েছিলো। আমি আবার আমার মূল্যবান কর্মীদের ছাটাই করতে চাচ্ছিলাম না তাই তাদেরকে মাসে মাসে ভর্তুকি দিয়েছি যা আমার আর্থিক অবস্থাকে খুব দুর্বল করে ফেলেছিল। এখন পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ায় আমার ব্যবসা মুখ তুলে তাকাতে সক্ষম হছছে। যদিও আমি এখনও লোকসান থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারিনি, আমি এখনও অনেক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।

আমি বি-স্কিলফুল এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্সের সাথে কাজ করে করোনার প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করার এবং ব্যবসাকে আবার স্থিথিশিল করতে কি কি করতে হবে তার পরিপূর্ণ ধারনা পেয়েছি। আশা করছি তাদের এই প্রশিক্ষণ আমাকে অনেক সহায়তা করবে এবং আমার ব্যবসাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য টিকিয়ে রাখবে। কেননা আমি কেবল মাত্র শুরু করেছি এবং আমার স্বপ্নপূরণের দৌড়ে আমি কখনও থামতে চাইনা।