Sushmita Bala, Khulna
সুস্মিতা পোল্ট্রি ফার্ম
937 Views

এইচএসসি পরীক্ষার ঠিক পরপরই আমার বিয়ে হয়। আমি বি.এ. পড়া শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারিনি। একজন সাধারণ গৃহিনী হয়েই দিন কাটছিল আমার। কিন্তু আমি আমার সময়কে আরও ভালো কোনো কাজে লাগাতে চাচ্ছিলাম। আমার কাছের মানুষজনের সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলার পর তারা আমাকে একটি পোল্ট্রি ফার্ম শুরু করার পরামর্শ দিলেন। বললেন এটি খুব লাভজনক ব্যবসা। এরপর আমি আমার স্বামীর সাথে আলোচনা করে ‘সুস্মিতা পোল্ট্রি ফার্ম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। 

২০১৭ সালে আমি ১০০০টি মুরগি দিয়ে আমার ব্যবসা শুরু করি। আমার ব্যবসাটি খুব দ্রুত বেড়ে উঠল এবং আমরা প্রচুর লাভ করতে শুরু করলাম। আমি খুব আনন্দিত ছিলাম। আমি কিভাবে ব্যবসাকে আরো উন্নত করা যায় সেদিকে মন দিলাম। এই চিন্তা থেকেই কোডেক এর প্রশিক্ষণে যোগ দিলাম। এ প্রশিক্ষণ থেকে আমি পোল্ট্রি খামার রক্ষণাবেক্ষণ, হাঁস-মুরগির টিকা দেওয়া, ডিমের যত্ন নেওয়া এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছিলাম। তাদের মাধ্যমেই আমি লাইটক্যাসল পার্টনার্স (এলসিপি) সম্পর্কে জানতে পারি। এলসিপি আমাকে ব্যবসা সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। এছাড়াও প্রশিক্ষণটি ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়েছিল, যা ছিল আমার জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে আমার কোনো ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ বা কর্মশালায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা নেই। আমি তাদের ট্রেনিং প্রোগ্রাম থেকে একটি ব্যবসা পরিচালনার সঠিক পদ্ধতি, হিসাব বই রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাগজপত্র সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি। 

বর্তমানে আমার দুইটি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। একটি মোরগের, অন্যটি মুরগির। ব্যবসা প্রসার করে আমি গবাদি পশুর খামার দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। আমি কিছু দিনের মধ্যেই আমার তৃতীয় খামারটি শুরু করব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আমি নিজেই আমার সব খামারের যত্ন নিই। তবে এটি মাঝে মাঝে আমার জন্য শারীরিকভাবে খুব কষ্টকর হয়ে যায়।

আমার স্বামী প্রায়ই আমাকে সাহায্য করেন, যাতে আমার উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। তিনি শুরু থেকেই আমাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে এসেছেন। তার সহায়তা ছাড়া আমার পক্ষে এই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হত। কারণ এই সমাজে কর্মজীবী নারীদের প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়।  উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে আমাকে নিয়ে গ্রামের মানুষ নানা কথা বলত। “মেয়ে হয়ে অতিরিক্ত স্মার্ট সাজার চেষ্টা করছি” এরকম মন্তব্যও শুনতে হত। আমি এসব নেতিবাচক মন্তব্যে কান দিতাম না। সবকিছু উপেক্ষা করে কেবল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতাম।

গ্রামবাসীদের কটু মন্তব্য তো ছিলই, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ  ও মহামারির কারণে ৪ বছরেরও বেশি সময় যাবত আমাকে লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে। আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের সময়, আমি ৫০,০০০ টাকা অর্থমূল্যের মুরগি হারিয়েছি। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সব মুরগি মারা যায়। এছাড়াও, কোভিড -১৯ মহামারিতে গত ২ বছরে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগির দাম মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে আমার হাঁস-মুরগিগুলোকে লোকসানে বিক্রি করতে হবে। আমি অন্তর থেকে প্রার্থনা করি যাতে এই কঠিন সময় খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যায়। তবে আমি এও জানি যে, একজন উদ্যোক্তার জীবনে বাঁধা আসবেই। তবে প্রতিটি প্রতিকূলতার সাথেই আসে একটি নতুন সুযোগ। তাই আমি বাঁধা-বিপত্তির কাছে  দমে যেতে পারিনা। আমার ব্যবসাকে সফলভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে।

সুস্মিতা পোল্ট্রি ফার্মকে আমি একটি দুগ্ধ খামারে প্রসারিত করতে চাছি। আমার ব্যবসা নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক। তাই আমি অক্সফ্যাম প্রকল্পে অংশ নিয়েছি, যাতে আমি আমার ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করতে পারি। বর্তমানে আমি আড়াই লক্ষ টাকার একটি বিনিয়োগের সন্ধান করছি। আশা করি আমি নতুন খামার গড়ে তুলার জন্য দরকারি অর্থ বিনিয়োগ করে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।