Sujon Saha, Khulna
শামা ফিশ ফিড
1,059 Views

আমি একজন আশাবাদী ব্যক্তি এবং আমি এ যাবতকালে অনেক আশীর্বাদ পেয়ে এসেছি। আমরা দুই পূর্বপুরুষ ধরে মৎস্যচাষের সাথে জড়িত। তাই, এটা আশ্চর্যের কিছু ছিল না যে আমি বড় হওয়ার পরে এই খাতেই নিজের নাম যুক্ত করব। আমার দাদা বিজয় কৃষ্ণ সাহা মাত্র আধা বিঘা জমি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন এবং আমার বাবা তার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন। আমার দাদার ব্যবসা ও স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমার বাবা দিনরাত অনেক পরিশ্রম করেছেন। এখন, আমার বাবার মৃত্যুর পর, আমাদের পারিবারিক ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আমৃত্যু আমার সকল কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার বাবা। তাই তাকে উৎসর্গ করেই আমার ফিশ ফিড মিলের নামকরণ শামা ফিশ ফিড করা হয়েছে। আমার জীবনটা পরিপূর্ণ হয়ে যেত যদি বাবা আজ আমার সাথে থাকতেন। ওয়ার্ল্ডফিশ আমার ফিশ ফিড ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে। তাদের সাথেই আমি ৫০-৫০ শেয়ারে মিলটি প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৫-২০১৯ পর্যন্ত তাদের চুক্তি ছিল। এরপরে শামা ফিশ ফিড আমার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়।

বর্তমানে, আমি বিভিন্ন এলাকায় মোট ১২৫ বিঘার ৯ টি ছোটবড় পুকুর পরিচালনা করি। তাদের মধ্যে এক-দুটি আমি পোনা বড় করার জন্য ব্যবহার করি এবং বাকিগুলোতে সে পোনা বড় হলে মাছ চাষ করি। আমি বছরে দুইবার মাছ পুকুরে ছাড়ি এবং সেখান থেকে আমার ভালো অঙ্কের অর্থ উপার্জন হয়। মাছ চাষ ছাড়াও, আমার কিছু কৃষি উদ্যোগ আছে যেখানে আমি রংপুরের খেজুর গাছ, বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম, বরিশালের বরই ইত্যাদি রোপণ করেছি। এগুলো সবই আমার ব্যবসায় একেবারেই নতুন সংযোজন তাই এগুলোর ফল পেতে আমার আরও কিছু সময় লাগবে। এর পাশাপাশি আমি ৫-৬ টি গরুও লালনপালন করি।

আমি আমার ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো সবসময় পরিবেশবান্ধব ও টেকসই রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তার ফলস্বরূপ আমি ২০১১ ও ২০১৮ তে দুইবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কৃষি পুরস্কার পেয়েছি। আমার এলাকার অনেক উদ্যোক্তা আমার সাফল্য দেখে মৎস্যচাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং আমি তাদেরকে আমার জায়গা থেকে সবটুকু সাহায্য করার চেষ্টা করি। তবে কোভিড-১৯ আসার পর মাছের খাদ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক উদ্যোক্তাকে এ খাত ছেড়ে দিতে হয়েছে। এমনকি আমার নিজের ফিড মিল থাকা সত্ত্বেও আমি গতবছর কোন লাভ আসেনি বললেই চলে। তাই যারা কেবল নতুন যুক্ত হচ্ছে মৎস্যচাষে, তাদের জন্য মুনাফা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সরকার আমাদের মতো মৎস্যচাষিদের জন্য কোন ভর্তুকির ব্যবস্থা না করে তাহলে আস্তে আস্তে মৎস্যখাত একেবারে ভেঙে পড়বে।

আমার দাদা সবসময় বলতেন যে, “স্বপ্ন দেখার কোন শেষ নেই” এবং আমি তার কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে চলেছি। এইযে ওয়ার্ল্ডফিশ, লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর আয়োজিত সকল ট্রেনিং প্রোগ্রাম আমাকে ফিশ ফিড, নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে যা আমাকে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। এখন, আমি রংপুরের খেজুরের প্রোজেক্টটি নিয়ে সামনে আরও ভালোভাবে কাজ করার কথা ভাবছি কারণ আমার মনে হয় এটি খুবই লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠবে। তাই এখন আমার প্রার্থনা এতটুকুই যে সকল মৎস্য উদ্যোক্তারা যেন খুব শীঘ্রই আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।