শাবাব লেদার
1,779 Views

আমি শাবাব লেদার ২০১৬ সালে শুরু করেছিলাম। এর আগে আমার পরিচয় একজন হিসাববিজ্ঞান এর শিক্ষিকা হিসেবে ছিল এবং আমি ভেবেছিলাম যে এম.বি.এ শেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে যুক্ত হব। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠেনি। একইসময়ে আমি শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে আরো চ্যালেঞ্জিং কিছু করার কথা ভাবি। তার ফলাফল হিসেবে আমি দুটো বায়িং হাউজে কাজ শুরু করি। ব্যতোয় হয়ে দাঁড়ায় কাজের মাত্রাতিরিক্ত চাপ। আমার বাচ্চা দুটোর জন্য সে কাজ তাই মাঝপথেই ছেড়ে দিতে হয়।

কেউ আসলে অনুমানও করতে পারবে না কি কারণে আমি এইরকম অপরিচিত একটা ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। সেটা ছিল মূলত আমার দূর্ভাগ্য। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারেই বড় হয়েছি তাই সবসময় কাজের পাশাপাশি আরেকটু অর্থ উপার্জনের কথা আমাদের ভাবতেই হতো। আমার স্বামীর বিদেশে অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল যারা প্রায় ক্যাপ, এপ্রন ইত্যাদি অর্ডার করত আর আমরা তা সরবরাহ করে থাকতাম। তো সেরকম এক বন্ধুই জাপান থেকে আমার স্বামীর সাথে ব্যবসা শুরু করার পরামর্শ দেয়। আমরা পার্টনারশিপে একটি ছোট ফ্যাক্টরি দিয়ে যাত্রা শুরু করি। আমাদের সব শিপমেন্ট আর অর্ডার সফলভাবে পৌঁছাতে পেরেছি এবং আস্তে ধীরে ব্যবসা লাভজনক হয়ে উঠলো। আমার স্বামী তাই ব্যবসার পুরোটাই নিয়ে নেওয়ার চিন্তা করে তার বন্ধুকে তার অংশটুকু বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তার বন্ধু শেষ একটা শিপমেন্ট নিয়ে কাজ করে শেয়ার বিক্রি করার কথা বলে। কিন্তু শিপমেন্ট পাঠানোর ৯ মাস পরেও আমরা কোনো অর্থ পাইনি। সে তার অংশটুকু ইতিমধ্যে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিলেও আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল।

আমাদেরকে কেরানীগঞ্জের পৈতৃক জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছিল ব্যাংকের ঋণ শোধ করার জন্য। আমার গহনা, ভারী যন্ত্রপাতি, এফডিআর সবকিছু থেকেই অর্থ সংগ্রহ করে শাবাব লেদার শুরু করেছিলাম মাত্র ৫ জন কর্মী দিয়ে। এখন প্রায় ৫০ জন আমার ব্যবসার সাথে যুক্ত এবং আমি আনন্দের সাথে বলতে পারি যে ব্যবসা দার করানোর পরে আমার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জাপান, ইতালি, কানাডা, স্পেন ও সিঙ্গাপুরসহ মোট ৯ টা দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানি করে থাকি। আমি বর্তমানে মরক্কোতেও রপ্তানি শুরু করার কথা ভাবছি। যদিও আমি বাংলাদেশে আমি নিজের ব্যবসার নামে পণ্য বিক্রি করতে পারি, বাইরের দেশে আমার পণ্যকে অন্য ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বিক্রি করা হয়। কিন্ত এখন আমি চাই এই বিষয়টায় পরিবর্তন আনতে। রপ্তানি ও পাইকারি বাজার বাদেও আমি দারাজ, বেলাওবেলা, ঐক্য এর মতো অনলাইন বাজারেও আমার পণ্য বিক্রি করে থাকি। 

করোনার সময়ে, এই অনলাইন মাধ্যম থাকার কারণেই আমি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পেরেছি। আমি লকডাউনের সময়েও উৎপাদন চালিয়ে গিয়েছি যা পরবর্তিতে এইসব অনলাইন বাজারে বিক্রি করতে পেরেছি। এর পাশাপাশি স্পেন থেকেও প্রথম লকডাউনএর পরে অনেক বড় অর্ডার পেয়েছি যা আমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত রাখতে সাহায্য করেছিল। 

সুইসকন্ট্যাক্ট দ্বারা আমাদের ফ্যাক্টরি পর্যবেক্ষণের সময় আমি লাইটক্যাসেল পার্টনার্সের ব্যাপারে জানতে পারি। আমি তাদের কাছে থেকে অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে আরও অনেককিছু জানতে পারি যার জন্য আমি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো। পরিশেষে আমি একটা কথা বলতে চাই যে আমাদের উত্থানের গল্প অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণামূলক লাগতে পারে কিন্তু বাস্তবতা এতটাও সহজ নয়। আমাদের অনেক ঝড়-তুফান পার করে এই জায়গায় আসতে হয়েছে। তাই এখন আমার সংকল্প এতটুকুই যেন আমি শাবাব লেদারের মাধ্যমে আমাদের ন্যায্য সম্মান ও সাফল্য নিয়ে আসতে পারি।