Anwara Siddiqua, Dhaka
ব্যাম্বু ক্রাফটস
1,839 Views

আমি ১৯৯৭ থেকে শিক্ষকতার সাথে জড়িত আছি। আমি বাচ্চাদের পড়াতে ভীষণ ভালোবাসি। একদিন বিশ্বকে বদলে দেবে এমন তরুণ মনের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য কাজ করে যেতে আমি প্রচণ্ড আনন্দবোধ করি। আমি মনে করি যে আমিও সেই পরিবর্তনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু, শিক্ষকতার পাশাপাশি আমার চারু ও কারুশিল্পের প্রতি সবসময়ই আগ্রহ ছিল। তাই আমি নিজের এই ইচ্ছা থেকে কিছু শুরু করার কথা ভাবলাম।

২০০২ সালে, আমার স্বামী কাজের সুবাদে চীনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন পর্যটন স্থান দেখার সুযোগ পান। সেসব জায়গায় তিনি বাঁশ দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় কিছু কারুকাজ দেখেছিলেন। যখন তিনি ফিরে আসেন, তখন তিনি আমাকে সেসব ছবি দেখিয়েছিলেন এবং আমি তাদের শৈল্পিক নিপুণতা ও সৃজনশীলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার থেকেই আমি মনে মনে ভাবলাম যে বাংলাদেশেও এরকম কারুশিল্পের কাজ করা সম্ভব। এখান থেকেই আমি আমার ব্যবসা শুরু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম যদিও আমি খুব সন্দিহান ছিলাম যে আমি সফল হতে পারব কিনা।

 ২০০৫ সালে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ একটি এসএমই মেলার আয়োজন করে। সেখানে আমি আমার কিছু কাজ প্রদর্শন করেছিলাম। আশ্চর্যজনকভাবে, আমি সেরা নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার জিতে যাই। এটি আমার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আমি আমার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সাহস পাই। ধীরে ধীরে আমার কাজ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এবং কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ পাই। আমি আমার পণ্যে বিচিত্রতা আনার জন্য শো-পিস থেকে শুরু করে বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র বানানো শুরু করি। আমার কাজ সবার কাছে অনেক ভালোভাবে সমাদৃত হয়েছিল যার ফলে অটবির সাথেও আমি কাজ করার সৌভাগ্য পাই। শুধু তাই নয়, আড়ং এর সাথেও আমি সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছি।

আমি বিশ্বাস করি যে সকল ব্যবসা টেকসই হওয়া উচিত। কেননা, এখন আমাদের ব্যবসাগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে যেন আমাদের পরিবেশ সংরক্ষিত হয় এবং মানুষরা উন্নত জীবনযাত্রা লাভ করে। তাই আমি অনেকগুলো বৃক্ষরোপণের উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়েছি। একটি সরকারি উদ্যোগের অংশ হয়ে, তাদের ১৭ একর জমিতে আমি বাঁশের বীজ রোপণ করি। আমি প্রতি বছর বিভিন্ন বৃক্ষ মেলায় অংশগ্রহণ করি যেখানে আমি বাঁশের গাছ বিক্রি করি। এছাড়াও, আমি চট্টগ্রামভিত্তিক বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সঙ্গে যুক্ত। তাদের মাধ্যমে আমি চট্টগ্রাম অঞ্চলের গারো কারিগরদের তৈরি বাঁশের কারুকাজ সংগ্রহ করি।

একজন উদ্যোক্তার জীবন বিভিন্ন ধরনের বাঁধা ও কঠিন সব পদক্ষেপের সমষ্টি। কিন্তু যদি আমি বিশেষভাবে কিছু উল্লেখ করতে চাই, আমি বলব যে এই খাতের শ্রমিকদের বেতন খরচ বহন সক্ষমতা অর্জন আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও,  কারুশিপ্লের জগতে কর্মীদেরও ব্যাপক অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যবসার জন্য বাঁশ সংগ্রহের জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গায় একা ভ্রমণ করতে হয়েছিল কারণ এটি সহজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এসবের কোনকিছুই আমাকে কখনও থামিয়ে রাখেনি কারণ আমি ভালোবাসার জায়গা থেকে আমার কাজ করে যাচ্ছি এবং বিশ্বাস করি যে এতে আমি অনেক বড় একটি উদ্দেশ্য হাসিল করছি।

মহামারীর সময়টি আমার জন্য সহজ ছিল না। আমার প্রচুর পরিমাণে অর্ডার প্রস্তুত ছিল কিন্তু লকডাউনের কারণে সেগুলো আমার ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম না। আমার অধীনে 12 জন শ্রমিক কাজ করত। কিন্তু আমি তাদের ৫ জনকে আমি আর সংযুক্ত রাখতে পারিনি কারণ আমার পক্ষে তাদের বেতন বহন করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল। আমি এতদিন খুদ্র পরিমাণে ঋণ নিয়ে আমার ব্যবসার অর্থায়ন করেছি কেননা কোন ব্যাংক আমাকে বড়ধরনের ঋণ অনুমোদন দেয় না। আমার জামানত বা অর্থ-সম্পত্তির পরিমাণ এতটা বেশি নয় যা তাদের দেখাতে পারব। যদি আমি বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি হতে বিনিয়োগ পাই, আমি আমার ব্যবসা প্রসারিত করব এবং আমার পণ্য রপ্তানি করব। এই ক্ষেত্রে, আমি লাইটকাস্টল পার্টনার্স থেকে যে প্রশিক্ষণ পেয়েছি তা সত্যিই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি রপ্তানি ব্যবসার সুযোগ ও ক্রেডিট লেটারের জন্য আবেদনের ব্যাপারে জানতে পেরেছি। এগুলো আমার ব্যবসায়িক দক্ষতাকে উন্নত করেছে।

বর্তমানে, চলমান মহামারী পরিস্থিতির কারণে, আমার ব্যবসা অনেক অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। আমি আমার পণ্য বিতরণে এবং সবকিছু সচল রাখতে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি। আমি আশা করি আমি এই মহামারীতে সফলভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারব এবং আমি যে কাজটি করছি তা চালিয়ে যেতে পারব। আমি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিস্ময়কর কারুকার্য প্রদর্শন করতে চাই। আমি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি যে আমি সেই দিনটিকে বাস্তবে পরিণত হওয়া দেখে যেতে পারি।