MMR Kishor, Rangpur
প্রজনন এগ্রো ফার্ম হাউস
1,270 Views

আমি উদ্যোক্তা হয়ে যাত্রা শুরু করার আগে একটি প্রকাশনীতে চাকরি করতাম। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই একটি ভাল চাকরি পাওয়া সত্ত্বেও আমি চাচ্ছিলাম নিজের কোন ব্যবসা দাঁড় করাতে। সেই ভাবনা থেকেই প্রজনন এগ্রো ফার্ম হাউসের বেড়ে ওঠা। যদিও আমি আমার পরিবার বা শ্বশুরবাড়ির কাছ থেকে খুব বেশি সমর্থন পাইনি, তবুও আমি কখনও আশা হারাইনি। আমি আমার স্ত্রীর মানসিক সহায়তার সাথে সমস্ত কঠিন সময় পার করেছি এবং এখন আমি বলতে পারি যে আমার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল।

আমার চাকরি জীবনের ৫ বছর পর, ২০১৭ সালের আগস্টে চাকরি ছেড়ে দিই এবং সেপ্টেম্বরে আমার খামার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। প্রাথমিক বিনিয়োগের সিংহভাগ আমার সঞ্চয় থেকে এসেছে, এবং আমার স্ত্রীও কিছু অবদান রেখেছে। আমি ৩০০+ বাচ্চা টার্কি দিয়ে আমার খামার শুরু করি। আমি ইউটিউব থেকে অনেক ভিডিও ও প্রতিবেদন দেখে জানতে পারি যে টার্কির বাজারটা লাভজনক এবং এখানে রপ্তানির সুযোগও আছে। এর পাশাপাশি আমি খামারের সামনে ফাঁকা জায়গায় পেঁপে ও লেবুর গাছও রোপণ করি। এভাবেই আমার খামার বড় হতে থাকল।

টার্কি এবং কোয়েল লালন -পালন করার দেড় বছর পর্যন্ত, আল্লাহর রহমতে আমি ভাল পরিমাণ লাভ করেছি। সেই মুনাফা দিয়ে, আমি আমার খামার প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিই। ২০১৯ সালে, আমি স্থানীয় বাজার থেকে ১০০০ এরও বেশি পালক মুরগি কেনার পরে কিছু সময় লাগে লালন-পালনের কৌশল শিখতে। কিন্তু, এবার আমার ভাগ্য নেতিবাচকদিকে মোড় নিল।

এই ক্ষেত্রে আমার অনভিজ্ঞতা আমাকে কঠিনভাবে সবকিছু শিখতে বাধ্য করেছিল। গবাদি পশুপাখির রোগের কারণে আমার শুরুতে হাসপাতালের বিল এবং চেকআপের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। মুরগির শারীরিক সক্ষমতা টার্কির চেয়ে দুর্বল হওয়ায় তাদের রোগ-বালাই বেশি হয়। যার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে আমার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আমার ১১০০-১২০০ মুরগি রানিক্ষেত রোগে মারা যায়। ডিমের উৎপাদনও কমে যায়। এতো বড় ধাক্কা সামলিয়ে নিতে আমার কিছু সময় লেগেছিল। কিন্তু আমি শক্ত মনোবল রেখে আমার ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকি।

অন্যদিকে, আমার বাগানের পেঁপে গাছ যথেষ্ট ভালভাবে বেড়ে উঠছিল। যদিও আমি বাগান কাজে নতুন ছিলাম তবুও আমার কোন উল্লেখযোগ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমি  বিক্রয় থেকে প্রায় ৫০,০০০ টাকা উপার্জন করেছি। আমার বাগান এখনও বাড়ছে, এবং আশা করছি, আমি খুব শীঘ্রই ফল বিক্রি থেকে ১,০০,০০০ টাকার বেশি আয় করব।

করোনা মহামারী আমাকে খুব বেশি আঘাত করেনি কারণ, সেই সময়ে, আমি ইতিমধ্যেই মুরগির রোগের সমস্যায় পড়েছিলাম। তাই করোনার প্রকোপ আমি তেমন একটা বুঝতে পারিনি। অপরদিকে, পেঁপে ও লেবু জন্য আমি শহর পর্যায়ে না যেয়ে স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করেছি। তাতে আমার মুনাফা তুলনামূলক কম হলেও ক্ষতি হয়নি।

লাইটকাস্টল পার্টনার্সের সাথে আমার অভিজ্ঞতা সংক্ষিপ্ত হলেও, আমি কিছুদিন আগে রংপুর জেলায় তাদের প্রশিক্ষণ সেমিনারে অংশ নিয়েছিলাম। গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের সমর্থন করার জন্য তাদের উদ্যোগটি আমার কাছে অনুপ্রেরণামূলক বলে মনে হয়েছিল। এখন, আমি আমার খামারে ভেড়া এবং গরু যোগ করার পরিকল্পনা করছি। আমি খুব শীঘ্রই আমার বাগান প্রসারের জন্য আমার খামারের কাছে কিছু জমি কিনব। এটি পশুদের চারণ ভূমি হিসেবেও কাজ করবে। খামার ও উদ্ভিদচাষের কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের পর, আমি আমার দক্ষতা এবং ক্ষমতায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি। এখন, আমার স্বপ্ন এই যাত্রা টিকিয়ে রাখা এবং আমার সততা দিয়ে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া।