Jahangir Alam, MM Agriculture Farm
এম এম এগ্রিকালচার ফার্ম
1,192 Views

দীর্ঘ পনের বছর আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কুয়েত মিশনের একটি অংশ ছিলাম। ২০০০ সালে আমি দেশ ছেড়ে কুয়েতে আমার সহযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেই। ২০১১ সালের মার্চ মাসে আমার দায়িত্ব শেষ হয়। সেখান থেকেই আমার  নতুন জীবনের গল্প শুরু। অবসর নেওয়ার পর আমি কি করতে পারি, সে ব্যাপারে আমি আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে আলোচনা করি। তারা আমাকে এমন কিছু করার পরামর্শ দেয় যাতে আমি একই সাথে পরিবারের সাথে থাকতে পারি এবং আয়ও করতে পারি। 

মিশন চলাকালীন আমার কাজ ছিল অন্যান্য সৈন্যদের ইউনিফর্ম সেলাই করা। তাই আমি আমার এ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে টেইলরিং এর ব্যবসা করার কথা ভেবেছিলাম। তখন আমি লক্ষ করি, আমার ঠিক বাড়ির পেছনেই একটি অব্যবহৃত পুকুর রয়েছে। আমি ভাবলাম এই পুকুরকে কেন ব্যবহার করছিনা? আমার মনে হল আমার জন্য মাছের ব্যবসা করা সেলাইয়ের ব্যবসায়ের চেয়ে বেশি লাভজনক হবে। তাই আমি মাছের ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।

উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে আমি মৎস্য চাষ সম্পর্কিত প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেই। এটি আমার ব্যবসায় সফলতা আনতে অনেক সহায়তা করেছে। আমি ওয়ার্ল্ড ফিশ আইডিইএ প্রকল্পেরও একটি অংশ ছিলাম। এই প্রকল্পের অংশ হওয়ায় আমি বিভিন্ন পেশাদারদের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি, যারা আমার ব্যবসার জন্য আমাকে সুপরামর্শ দিয়েছে। আমি তাদের মাধ্যমে লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর সম্পর্কেও জানতে পারি। লাইটক্যাসল এর মাধ্যমে একটি ব্যবসার সামগ্রিক পরিচালনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। যেহেতু আমার এই ব্যপারে প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা, আমার জন্য এই অভিজ্ঞতার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। 

আমার সবচেয়ে বেশি বিক্রিত মাছের মধ্যে আছে রুই, মৃগেল, পাঙ্গাশ, বিগহেড কার্প, শিং, পাবদা এবং চিংড়ি। আমার খামারে মাছের পোনা ও বড় মাছ উভয়ই পাওয়া যায়। তাছাড়া আমি আমার বাগানে আম চাষ করি। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমার ব্যবসা খুব ভাল চলছে। ব্যবসার প্রথম থেকেই আমি লাভের মুখ দেখেছি।  খাদ্যপণ্যের চাহিদা সবসময়ই থাকে। তাই আমাকে কখনোই ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু তারপর মহামারির প্রকোপে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। সব কিছুর দাম বেড়ে যায়৷ যার ফলে আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য খরচ অত্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া বাজারে মাছের চাহিদাও ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর বন্যার কারণে আমার মাছের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। এসব কিছু মিলিয়েই আমার বিশাল ক্ষতি হয়েছে। 

কোভিড-১৯ হওয়ার আগে আমি বার্ষিক ৫-৬ লক্ষ টাকা লাভ করতাম। কেবল গত বছরই আমার সাড়ে ৪ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আমি এখনও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তবে আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি সামনে ভাল দিন আসবে। এই বিশ্বাস মনে নিয়ে আমি আমার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ব্যবসাকে ঘিরে আমার প্রচুর স্বপ্ন এবং আশা রয়েছে। আমি আমার খামারকে হ্যাচারিতে রূপান্তর করতে চাই। বর্তমানে আমার সাথে একজন কর্মচারী কাজ করছেন। তবে আমি আমার ব্যবসাকে বড় করে আরও বেশি লোক নিয়োগ করার স্বপ্ন দেখি। আমি মহামারির এই দুর্ভোগ শীঘ্রই শেষ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি যাতে আমি আমার স্বপ্নগুলি পূরণ করতে পারি।