Raihan Uddin, Khulna
একজন তরুণ উদ্যোক্তার নিজের অদম্য বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলার গল্প
775 Views

আমি আমার ছাত্রজীবনে থাকাকালীন অবস্থায় উদ্যোক্তা হয়েছিলাম। তখন আমাকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। কিন্তু আমার মধ্যে তখন থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রবল ইচ্ছা জেগে ওঠে। এইবং ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করার জন্যেই আমি কখনও অজানার পথে পা বাড়াতে ভয় পাইনি। আমি পথে অনেক ভুল করেছি কিন্তু সেসব থেকেই অনেক কিছু শিখেছি যা কোন প্রতিষ্ঠান আমাকে শেখাতে পারত না।

আমি আমার গরুর খামার শুরু করেছি মাত্র আড়াই বছর আগে। কিন্তু যখন আমি কলেজে পড়ি তখনই আমি ব্যবসায়িক জীবনে পা রেখেছি। চাল বিক্রি দিয়ে আমি আমার প্রথম ব্যবসা শুরু করি। আমার চাচারা এই ব্যবসায় জড়িত থাকার ফলে আমিও এই ব্যাবসায় যোগদান করার অনুপ্রেরণা পাই। কিন্তু শীঘ্রই আমি বুঝতে পারি যে আমি এটি সফলভাবে চালাতে পারব না কারণ এতে আমাকে ক্রেডিটের সাপেক্ষে সবকিছু করতে হচ্ছিল। সে সময়ে আমি একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছিলাম, তাই ক্রেডিটের ভিত্তিতে কাজ করা আমার সাধ্যের মধ্যে ছিল না। তাই আমি কাঠের ব্যবসা  শুরু করি এবং সেই ব্যবসায় আমি যথেষ্ট প্রবৃদ্ধিও পেয়েছি। কিন্তু মহামারী আঘাত হানার কারনে আমাদের এলাকার সমস্ত করাতকল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন থেকেই আমার বিক্রয় অনেক কমে যায়ে।

ভাগ্যক্রমে আমার ইতিমধ্যে একটি গরুর খামার ছিল। প্রাথমিকভাবে, আমি এটি আমি আমার ভাললাগা থেকেই শুরু করি। কিন্তু যখন লকডাউন শুরু হয়ে তখন আমাকে আমার কাঠের ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তাই আমি আমার গবাদি পশুর খামারের দিকেই পুরোপুরি মনোযোগ দিলাম এবং কয়েক মাসের মধ্যেই আমি দেখতে পেলাম যে আমার অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগের তুলনায় এখানে লাভের পরিমাণ ব্যাপক। তখনই আমি অনুভব করি যে আমার এটি চালিয়ে যাওয়া উচিত।

যদিও আমি এই খামারের মাধ্যমে অনেক লাভ করেছি, এটাকে সফল করার জন্য আমাকে সে পরিমাণ কষ্টও করতে হয়েছে। আমাকে গাইড করার মতো কেউ ছিল না এবং গরু পালন সম্পর্কে আমার জ্ঞানও ছিল সামান্য, ফলে আমি অনেক ভুল করেছি। আমার একটি গরু ২০২০ সালে মারা গিয়েছিল কিন্তু এর কারণ কি তা আমি শনাক্ত করতে পারিনি। এছাড়া আমাকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, আমি আমার এলাকার অভিজ্ঞ লোকদের সাহায্য নিয়ে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করি এবং আমার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে গেছি।

যখন আমি আমার নতুন গবাদি পশুর উদ্যোগকে সফল করার চেষ্টা করছিলাম, তখন আমি অক্সফামের উদ্যোগ যা গ্রামীণ বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের যুব উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের জন্য আয়োজন করা হচ্ছিল তা সম্পর্কে জানতে পারি। আমার এক বোন কোডেক নামে এনজিওতে কাজ করে এবং সেই এনজিওর মাধ্যমে সে এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পারে।  আমার বোনই আমাকে নির্দেশনা এবং আর্থিক সহায়তার জন্য যোগ দিতে বলে। তাই, আমি সেখানে যোগ দিই এবং এর মাধ্যমে আমি লাইটকাস্টল পার্টনার্স সম্পর্কেও জানতে পারি। উভয় সংগঠনই আমাকে এতটা সাহায্য করেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। লাইটক্যাসল পার্টনার্স আমাকে ১ লাখ টাকার ঋণ পেতে সাহায্য করেছে যা আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। আমরা সবাই জানি আমাদের ছোট ব্যবসার মালিকদের জন্য ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়া কতটা কঠিন। কিন্তু লাইটকাস্টল পার্টনার্স পুরো প্রক্রিয়াতিকে আমাদের মত ক্ষুদ্র ব্যাবসায়িদের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছে।

আগে আমি গরু রাখার জন্য একটি খামার ভাড়া করতাম। কিন্তু আমি লাইটকাস্টল পার্টনার্সের কাছ থেকে যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে আমি একটি খামার কিনেছি। এখন আমি আমার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আরো গরু কেনার কথা ভাবছি। আমি উত্তরাধিকার সূত্রে এক টুকরো জমি পেয়েছি যার উপর আমি একটি বড় খামার গড়ার স্বপ্ন দেখি। আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। আমার বাবা-মাও অনেক বৃদ্ধ। এজন্যই আমি একজন আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি হতে চাই যাতে আমি আমার বাবা-মায়ের যত্ন নিতে পারি এবং আমার চাহিদা পূরণ করতে পারি। যদি সবকিছু ঠিক মতো চলতে থাকে, সর্বশক্তিমানের কৃপায়, আমি এই স্বপ্নকে একদিন সত্যি করে তুলব।