M. Enamul Haque Milon, Khulna
ইউনিক এগ্রো সার্ভিস সেন্টার
844 Views

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের প্রথমদিকে। আমি ১৬ বছর বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি করার পরে নিজের কিছু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর সেখান থেকেই ইউনিক এগ্রো সার্ভিস সেন্টার-এর বেড়ে ওঠা যা এলাকার নারীদেরকে বিপণনের আধুনিক কলাকৌশল শিখতে সহায়তা করে।

আমার খামার শুরু করার জন্য আমি ও আমার মা আমাদের সঞ্চয়কৃত টাকা থেকে বিনিয়োগ করি। ৪ বছর পর, একটি স্থানীয় ব্যাংক আমার কাজ দেখে এবং আমাকে আমার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি সুদহীন ঋণ নিতে অনুপ্রাণিত করে। এরপরে আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

আমি স্থানীয় মহিলা সম্প্রদায়ের সাথে আমার পরিকল্পনা নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছি। আমরা একটা সমঝোতায় আসতে চাচ্ছিলাম যেখানে সবাই উপকৃত হবে। ২ বছর পরে আমার খামার থেকে ১০০ জনকে আমি ১০ টি করে হাঁস ও দেশি মুরগি দেই লালন-পালনের জন্য। আমার উদ্দেশ্য ছিল তাদের পরিবারে পরিপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করার মাধ্যমে আমার ব্যবসাকে আরও বড় করা। এর পাশাপাশি, তারা কিছু শাকসবজিও উৎপাদন শুরু করে। ডিম ও মাংস তারা নিজেদের জন্য রেখে বাজার দরে আমার কাছে বিক্রি করে। আমি তা পরবর্তীতে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করি।

এখন আমি ঢাকা থেকেও কিছু অর্ডার পাচ্ছি যারা আমার খামারের পণ্য নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি শুধুমাত্র আমার স্থানীয় বাজারের চাহিদা দিয়েই ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারব। মাসশেষে আমার খামার ও উৎপাদিত শাকসবজি থেকে আনুমানিক ৭,৫০,০০০ থেকে ৭,৭৫,০০০ টাকা আয় হয়। বর্তমানে, ৬০০ থেকে ৭০০ এর মতো নারী ও কিছু সংখ্যক পুরুষ আমার উনিক এগ্রো এর সাথে জড়িত আছেন।

মহামারীর কারণে আমার ব্যবসা একদম স্থবির হয়ে পড়েছিল। সবাই মৃত্যুভয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম এবং বাজার চাহিদাও একদম কমে গিয়েছিল। লকডাউনের মাঝে ৭৬ দিন আমরা উৎপাদন একেবারেই বন্ধ রেখেছিলাম। এরপরে যখন সব স্বাভাবিক হতে শুরু করলো তখন আমরা ধীরেধীরে সবকিছু  কোভিড-১৯ নীতিমালাসমূহ মেনে চালু করি। কিন্তু, তাও আমাদের ৬ মাসের মতো সময় লেগেছিল আগের অবস্থায় ফিরে যেতে। তাই, আমার ব্যবসা শুরুর পরে এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা ছিল।

ভবিষ্যতের জন্য আমার ইতিমধ্যে কিছু পরিকল্পনা আছে। আমি জানি যে হাঁস-মুরগি, শাকসবজি এসবের চাহিদা দিনদিন বাড়তেই থাকবে। সুতরাং, আমার খামারকে যদি আমি একটি স্থানীয় ব্র্যান্ডে পরিণত করতে পারি তাহলে আরও বেশি মানুষ আকৃষ্ট হবে এবং আমাদের উপর আস্থা রাখবে। ভাল প্যাকেটজাতকরণ ও একটি ডেলিভারি সিস্টেম এই স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা এখন আমার নতুন স্বপ্ন। এসবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারলে বাজারে খামারজাত পণ্যের সঠিক দাম নিশ্চিত করা যাবে এবং ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পুষ্টিকর খাদ্য পাবেন।

এখন, আমার লক্ষ্য স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো। তারা নিজেদের কাজ সম্পর্কে অবগত থাকলেও বিপণন পদ্ধতি সম্পর্কে আরও জ্ঞানলাভ করা সময়ের দাবি। লাইটক্যাসল পার্টনার্সের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার ব্যবসার ক্ষেত্র ছোট হলেও আমাকে বৈশ্বিক ধারণা অনুযায়ী আগাতে হবে। আমি পরবর্তীতে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগদানের মাধ্যমেও এসব ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে পেরেছি। তাই, আমি চাই যেন আমার সাথে যারা কাজ করছেন তারাও অভিজ্ঞদের থেকে বিপণন বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করেন।

যদি কোনভাবে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা যায় তাহলে স্থানীয় মানুষগুলো অনেক উপকৃত হবে। তার জন্য, আমি চাই কোন অভিজ্ঞ সংস্থা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক। এর ফলে, আমার মতো আরও অনেকে তাদের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যেতে পারবে। পরিশেষে, আমি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসার কাজ করার পরে বলতে পারি, যারা কঠোর পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক, সাফল্যর পথ তাদের জন্য প্রসারিত হয়ে যায়।