Kajol Golder, Khulna
কাজল গোলদারের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
1,175 Views

আমাদের সমাজের অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে একজন মহিলা সবদিক থেকে সীমাবদ্ধ, তারা স্বাবলম্বী হতে পারে না বা তাদের নিজেদের কোন জীবন নেই। কিন্তু আমি কখনই এই ধারণাগুলো তোয়াক্কা করিনি। আমার বেড়ে ওঠা গ্রামীণ পরিবেশে হলেও, আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি যে নারীরা চাইলেই নিজেদের পরিচয় বানাতে পারে। এই বিশ্বাসকে মাথায় রেখেই আমি ৪ বছর আগে আমার উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। আমার যাত্রা পথে আমি অনেক চরাই-উতরাই পার করেছি এবং অনেক মূল্যবান ও জীবনমুখী শিক্ষা পেয়েছি।

শুরুর দিকে, আমি আমার ননদের সাথে ভার্মি কম্পোস্টের ব্যবসায় জড়িত ছিলাম। কিন্তু পরে, আমি গবাদি পশু পালনের সিদ্ধান্ত নিই। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার গবাদি পশুর খামার থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট আমাদের ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে। এভাবে আমরা একে অপরকে সাহায্য করে ব্যবসার উন্নতি তরান্বিত করতে পারব।

আমার ব্যবসার শুরু থেকে ঝামেলার মুখ যে দেখতে হয়নি বিষয়তা তেমন নয়। ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আমাকে বেশ কিছু অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারী সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। আমার সার ব্যবসা করুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মহামারীর কারণে সারের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। কিন্তু অন্যদিকে আমার গরুর ব্যবসায় কোন সমস্যা হয়নি। আমি আশা করছি যে এই মহামারী শেষ হওয়ার পরে খুব শীঘ্রই আমার ব্যবসা পুনরুজ্জীবিত হবে।

ব্যবসায় আমি ভালো ও খারাপ, দুইসময়ের মধ্যে দিয়েই গিয়েছে। আমি কখনও ভেঙে পরিনি কারণ আমার পরিবার আমাকে সবসময় আমাকে সমর্থন করেছিল। আমার স্বামী আমার ব্যবসায় আমাকে প্রচুর সমর্থন করে। তাকে ছাড়া আমি একার পক্ষে এতবড় ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব হতো না। এখন আমার ব্যবসা এত ভালো চলছে যে আমি আমার ব্যবসা থেকে যে লাভ পাচ্ছি তা আমার সন্তানদের পড়ালেখা এবং আমার পরিবারকে আরও সুন্দর রাখতে খরচ করার সুযোগ পাই। এছাড়াও, আমি ব্যবসায় আমার লাভের একটি অংশ পুনঃবিনিয়োগ করি এবং এখনও আমার সঞ্চয়ে অনেকটুকু অবশিষ্ট আছে।

আমার ব্যবসার এতো উন্নতির জন্য অক্সফাম ও লাইটক্যাসল পার্টনার্সের ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। আমি অক্সফামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে লাইটক্যাসল পার্টনারদের সম্পর্কে জানতে পেরেছি। প্রশিক্ষণগুলোর মাধ্যমে আমি ব্যবসা পরিচালনা সম্পর্কে ভালো কিছু পরামর্শ পেয়েছি এবং হিসাব-নিকাশের ব্যাপারেও নিজেকে আরও সচেতন করতে পেরেছি।

আমি আমার ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু এইরকম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমার ব্যবসার সম্প্রসারণে অর্থায়ন যোগাড় করা কঠিন। এই অনিশ্চিত সময়ের কারণে আমি ঋণ চাইতেও দ্বিধাবোধ করছি। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে আমি  নিশ্চিত নই। কিন্তু পরবর্তীতে আমি যখন বিনিয়োগের সুযোগ পাব তখন আমি আরও বড় জমি কিনে তাতে আমার খামার আরও বড় আকারে করার পরিকল্পনা করছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং এই মহামারী শেষ হলে, আমি আমার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাব।