আমার প্রতিবেশীদের সবাই আমাকে শিল্পি আপা নামে চেনে। গ্রামে আমার সাহস ও সংকল্পের জন্য আমার বেশ সুনাম আছে। পাঁচ বছর আগে, আমি রংপুরে আমার মাছের খামার চালু করি। ১২ বছরেরও বেশি সময় একটি বড় সংস্থার সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে কাজ করার পর, আমার নিজের খামার করার স্বপ্ন জাগে। আমি ভাবি, যত ছোটই হোক না কেন, তা হবে একান্তই আমার নিজের রাজ্য।
আমার স্বামী এবং ভগ্নিপতি আমাকে প্রচুর উৎসাহ দেন। আমি ভাগ্যবান যে আমি আমার পরিবার থেকে প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু গ্রামের অনেক মানুষ এটি সহ্য করতে পারত না। একজন মহিলাকে কোনও ঝামেলা ছাড়াই সফলভাবে ব্যবসা করতে দেখে তারা ঈর্ষা করত। তারা বিভিন্নভাবে আমার ব্যবসার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে, যাতে এটি বন্ধ হয়ে যায়। একটা সময়ে আমার অনেক বড় বড় মাছ কোনও কারণ ছাড়াই মারা যাচ্ছিল। আমরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও এর কারণ শনাক্ত করতে পারিনি। আমি তখন ২-৩ লক্ষ টাকার মাছ হারিয়েছি। স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই সন্দেহ করেন যে গ্রামের লোকেরা হিংসা করে আমার মাছের ক্ষতি করার জন্য পানিতে কিছু মিশিয়েছিল।
আমি এরপর মাছের নতুন চালান লালন-পালন শুরু করি। ছেলেবেলা থেকেই আমি খুব সাহসী ছিলাম। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আমি যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারব। তাই আর্থিক ক্ষতি আমার মনোবল ভাঙতে পারেনি। আমার সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস আমাকে সবকিছুর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণা যুগিয়েছে।
মহামারির প্রভাবে বাংলাদেশের সব জায়গায় মাছের দাম ব্যাপকভাবে কমেছিল। আমার এলাকার অন্যান্য মাছ চাষিদের মত, আমাকেও তখন আমার মাছগুলি অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হয়। কারণ অন্যথায় মাছগুলি পচে যেত। প্রতিটি দুঃসময়ে কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয়। আমি শুধু কোনমতে ২০২০ সালটা টিকে থাকতে চেয়েছিলাম।
পূর্বে মাছ চাষ সম্পর্কে আমার কোনও পেশাদার অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছিল না। যার কারণে আমি বেশ কিছু ভুল করেছিলাম। তবে এই ভুল থেকে আমি শিখেছি এবং আস্তে আস্তে আমার ব্যবসাকে সফল করেছি। ওয়ার্ল্ড ফিশ এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্স আমাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে সামগ্রিকভাবে সহায়তা করে। তাই আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
এই মুহূর্তে, আমি একটি নতুন পুকুর লিজ নিয়ে আমার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাইছি। তার জন্য আমার প্রয়োজন ২ লক্ষ টাকা। আমি স্থানীয় ব্যাংকগুলিতে লোন এর জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু সঠিক কাগজপত্র না থাকায় তারা আমাকে লোন দিতে চান নি। বর্তমানে লাইটক্যাসল পার্টনার্স আমাকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে সহায়তা করছে।
আমি রংপুরের একজন আদর্শ মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে গ্রামের সকলকে গর্বিত করার স্বপ্ন দেখি। মাছ চাষের পাশাপাশি আমি কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে শাকসবজি চাষ শুরু করতে চাই। আমি আমার বাড়ির উঠানের প্রতিটি ইঞ্চি কাজে লাগিয়ে পুষ্টিকর শাকসবজি চাষ করে সারা বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে পারলে নিজেকে সার্থক বলে মনে করব।