M A Majid, Khulna
ইউনিক ফুড প্রোডাক্টস
1,235 Views

১৯৯৮ সালে, আমি আমার নিজস্ব ব্যবসা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসি। আমি একটি মোটর দোকান খুলি, কিন্তু কিছুদিনেই বুঝতে পারি যে এই ব্যবসায় খুব বেশি দুর্নীতি ছিল। তখনকার সময়ে জাপান থেকে পণ্য আসত। কিন্তু ওইটার সিল পরিবর্তন করে ‘মেড ইন থাইল্যান্ড’ যুক্ত করে দিয়ে দাম বেশি রাখা হতো। আমি সবসময় হালাল পদ্ধতির মাধ্যমে আমার আয় করতে চেয়েছিলাম, তাই আমি এই ব্যবসায় বেশিদিন থাকতে পারিনি। পরে, আমি কোরিয়ান হুন্ডাই কোম্পানিতে যোগদান করি। একজন উদ্ভাবক এবং সেলস পারসন হিসেবে আমাকে অনেক অনৈতিক বিষয়বস্তু দেখতে হয়েছে। ই কারণেই আমি ২০০২ সালে আমার গ্রামে ফিরে যাই।

আমার প্রকৃত উদ্যোক্তা যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে যখন আমি নিজেকে কৃষিখাতে নিয়োজিত করি। ইউনিক ফুড প্রোডাক্টস আমার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাধারণ মানুষদের জন্য কাজ করার মাধ্যম হিসেবে তৈরি করি। আমি আমার পৈতৃক জমিতে একটি জৈব খামার তৈরি করি। এই বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রের গভীরতা আরও ভালোভাবে জানার জন্য আমি বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সাথে কৃষি, পশুসম্পদ এবং মৎস্য চাষের সমস্ত দিক নিয়ে আলোচনা করে তাদের মতামত নিয়েছি। তারপর, আমি ধীরে ধীরে সেইসব ক্ষেত্রে আমার সাধ্যমতো কাজ করা শুরু করি। আমার উদ্ভাবন এবং উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলি শুরু থেকেই সফল ছিল যা আমাকে অনেক মেধাবী ও উজ্জ্বল মানুষদের সাথে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।

কৃষি উৎপাদনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর আমি একজন গবেষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবে বাজারে সুনাম অর্জন করেছি। ২০১২ সালে, আমি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ লাভ করেছি। তাদের সহযোগিতার পাশাপাশি, আমি আমার জ্ঞানকে আরও পরিপূর্ণ করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অধ্যাপক ও উদ্ভাবকের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ করি। আমরা কৃষি, মৎস্য, এবং পশুসম্পদ আরও দক্ষ হওয়ার জন্য সকল পদ্ধতি অন্যদের সাথে শেয়ার করি যাতে অন্যরাও লাভবান হয়।

আমার অর্গানিক খামারের কর্মসূচি ইতিমধ্যে অনেক জেলায় ছড়িয়ে গেছে। ২০১৯ সালে প্রথম আলো আমার উদ্ভাবন ও জীবনের কাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রায় ২০ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করার পরেও, আমি এখনও কৃষিখাতে আরও উন্নত করার জন্য কোন বিনিয়োগ বা আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। ক্রমাগত গবেষণার কারণে আমাদের খামারের আর্থিক অবস্থা প্রায় সময়েই অস্থিতিশীল থাকে। আমরা ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ চাই না। আমাদের দেশের কৃষির ভবিষ্যতে বিশ্বাস করে এমন একটি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে আমাদের যথাযথ অর্থায়ন প্রয়োজন।

আমি যে সমস্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচী এবং সেমিনারে অংশ নিয়েছি তা আমার জীবনে নানাভাবে সাহায্য করেছে। হোক সেটা নতুন কোন জ্ঞান অর্জনে বা আমাদের মতো চিন্তাশীল মানুষের সাথে সম্পর্কে আরও মজবুত করতে। লাইটক্যাসল পার্টনারস এর ব্যতিক্রম নয়। গেইন ন্যাশনালের সাথে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ প্রকল্প আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। দেশের এসএমইগুলোকে উৎসাহিত করার তাদের জন্য তাদের প্রয়াস খুবই প্রশংসনীয়। এখন, আমি আমার জীবন থেকে একমাত্র জিনিস চাই তা হল স্বাস্থ্যকর এবং বিষমুক্ত খাবার সবার জন্য উন্মুক্ত করা। তরুণদের আমাদের কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং এখাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কৃষি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা নিশ্চিত করে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিতে পারে এবং আমি আশা করি সেই দিনটি শীঘ্রই বাস্তবতায় পরিণত হবে।