আমি আমার পরিবার এবং প্রতিবেশীর উপহাসের শিকার হয়েছিলাম। তাদের ভাষ্যমতে, আমি আমার বাবা -মা এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমকে ব্যর্থ করেছি কারণ আমি ডিপ্লোমা শেষ করার পরেও চাকরির সন্ধান পাইনি। তারা বলেছিল আমি আমার পরিবারের জন্য অসম্মান নিয়ে এসেছিলাম এবং আরো অনেক কিছু যা আমাকে গভীরভাবে আঘাত করেছিল। কিন্তু আমি শুধু তাদের কঠোর মন্তব্য শুনে তার প্রতিবাদে কিছু না করে থাকতে পারিনি। আমি তাদেরকে ভুল প্রমান করতে চেয়েছিলাম এবং তাই করেছি।
২০১৬ সালে ডিপ্লোমা শেষ করার পরে আমি অনেক জায়গায় চাকরির আবেদন করি কিন্তু কোথাও থেকে কোন ইতিবাচক জবাব পাইনি। এরকম বিষণ্ণতাঘেরা সময়ে, আমি ফেসবুক ও ইউটিউব -এর সন্ধান পাই। আমি শুনেছিলাম যে এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আমি বিনামূল্যে যেকোনোকিছু শিখতে পারব। তাই, আমি আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এই মাধমগুলো ব্যবহার করেছিলাম এবং দুগ্ধ ও মাছ চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলাম। আমি দেশ-বিদেশের অনেক সফল কৃষক ভাইদের থেকে অনেক কিছু শিখলাম। আমার দিনরাতের অনেকটা সময় চলে যেত নতুন পদ্ধতি ও কৌশল শিখতে।
অনেক গবেষণার পর, আমি অবশেষে ২০১৭ সালে আমার খামার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেই সময়ে, আমার নিজের বাড়িতে একটি পুকুর এবং একটি গরু ছিল। তাই, আমি এই দুটি দিয়েই আমার খামার শুরু করলাম। পরবর্তীতে, আমি এক লক্ষ টাকা ঋণ ও দুটি গরু কিনলাম। এই নিয়ে আমি এক নতুন জীবনে পা দিলাম। আমার ঋণের সময়সীমা এক বছরের ছিল এবং আমি এই সময়েই আমি আমার খামারের গরু বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছিলাম। উপরন্তু, আমার নিজের জন্যও কিছু লাভ বাকি ছিল। ২০১৮ সালের শেষের দিকে আমি আরও ২ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে তা আমার ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও ৩টি গরু কিনি ও একটি পুকুর ধার নিই। এভাবে আমার ব্যবসা বাড়তে থাকে। বর্তমানে, আমার ৫ টি গরু, ২ টি পুকুর, এবং একটি ফলের বাগান আছে তিন বিঘা জমির উপর। আমি সেখানে পেয়ারা আর বরই উৎপাদন করি।
সাফল্যের এই পথচলায় অনেক প্রতিকূলতা ছিল। ঠাট্টা -বিদ্রুপ ছাড়াও আমাকে ঋণ মঞ্জুর করতেও লড়াই করতে হয়েছিল। আমার ব্যবসার শুরুতে আমি একবারে ঋণ পাইনি। বরং, আমাকে ৩-৪ বার আবেদন করতে হয়েছিল। সময়গুলো কঠিন ছিল। কিন্তু আমি আমার আত্মবিশ্বাস ভাঙতে দেইনি ও সামনে এগিয়ে গেছি। আজ, আমি গর্ব করে বলতে পারি যে, আমি আমার কষ্টের ও ত্যাগের ফল দেখতে পাচ্ছি। এখন, আমার পরিবারও আমাকে সমর্থন করে এবং বলে যে তারা আমার একনিষ্ঠতা ও সাহসের জন্য গর্বিত। তাদের প্রশংসা শুনতে ভাল লাগে। এই পর্যায়ে এসে অনুভব করতে পারি যে আমি কিছু করতে পেরেছি, সেটা যত ছোটই হোক না কেন।
আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছাড়াও, মহামারী মোকাবেলা করা আমার জন্য একটি বড় বাধা ছিল। এর ফলে প্রায় সব কিছুর দাম কমে গেছে যার ফলে আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মহামারীর আগেও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার চাহিদা কম ছিল কিন্তু এখন তা আরও খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে। আমার মাছের বিক্রিও মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়ে আমার বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই, আমি আমার উপার্জনের বৈচিত্র্য এনে এই বছর ফলের খামার শুরু করেছি। আমার অন্য উদ্যোগগুলর মতো আমার ফলের বাগানকেও সফল করার লক্ষ্য নিয়েছি। আমি ওয়ার্ল্ডফিশের আইডিইএ প্রকল্পে অংশ নিয়েছি যেখানে আমি অনেক বিশেষজ্ঞকে কাছে পেয়েছি্লাম যারা আমাকে একটি মাছের খামারকে আরো দক্ষতার সাথে বজায় রাখার এবং মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি লাইটকাস্টল পার্টনারদের সাথে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম যা আমাকে আমার সামগ্রিক ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে। আমি এই অভিজ্ঞতাগুলোর জন্য মন থেকে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
বর্তমানে, আমার কাছে ৮-১০ জন কর্মী খণ্ডকালীন কাজ করছে। কিন্তু বেশিরভাগ কাজ আমি ও আমার পরিবার মিলে করি। আমি আমার ব্যবসাকে আরও বড় করার স্বপ্ন দেখি যাতে আমি আমার লোকালয়ের ৪-৫ জনকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারি। আমি চাইনা অন্য কেউ আমার মতো বেকারত্বের কষ্ট লাভ করুক। আমি একটি ভার্মি কম্পোস্ট কেন্দ্রও শুরু করতে চাই। কিন্তু সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমার প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতা। শুধুমাত্র ব্যাংকের ঋণ দিয়ে যা সম্ভব না। তাই, আমি যদি ২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পাই, আমি সফলভাবে আমার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে এবং আমার স্বপ্নকে জয় করতে সক্ষম হব।