রেনু বালার গবাদি পশু ব্যবসার সফল উদ্যোগ
1,103 Views

আমি এ কথা বলতে পারব না যে গবাদি পশুর ব্যবসার সাথে আমার সম্পর্ক অনেকদিনের কিন্তু ১২ বছর নেহাতেই কম সময় নয়। আমি সবসময় দেখতাম যে আমার নিকটবর্তী সবাই রকমারি ব্যবসার সাথে জড়িত কিন্তু আমার নিজের ব্যবসা শুরু করতে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। অবশেষে, আমি ২০১০ সালে গবাদি পশু নিয়ে আমার ব্যবসা শুরু করি। এর আগে শুধু আমার স্বামী কাজ করতেন কিন্তু আমি কাজ শুরু করার পরে আমাদের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আমরা দুইজনেই নিজের আয় দিয়ে পরিবার আরও ভালোভাবে চালাতে পারছিলাম।

যখন আমি অল্পবিস্তর কাজ করতে শুরু করেছি, তখন আমি অক্সফাম এর রি-কল প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পারি। প্রকল্পটি আমাদের জীবিকার মান বাড়াতে আমাদের মতো নারীদের উৎসাহিত ও ক্ষমতায়ন করেছে। তাদের প্রশিক্ষণে আমি গবাদি পশুর ব্যবসা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ পাই। আমি একজন সদস্য হিসেবে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে এসব ব্যাপারে জ্ঞানলাভ করতে থাকি। তাদের কাছ থেকে. আমি ক্রসব্রিড গবাদি পশু সম্পর্কে জানতে পেরেছি যেগুলি ব্যবসার জন্য বেশি উপকারী। কারণ তারা বেশি দুগ্ধ উৎপাদন করতে পারে এবং পরিচালনা করা সহজ।

গবাদি পশুর আরেকটি বড় সুবিধা হল এদের প্রতি বছর সুস্থ বাচ্চা প্রদানের সক্ষমতা। তাই আমি জানতাম যে আমার পরবর্তীতে কি করতে হবে। আমি আস্তে আস্তে আমার খামার বড় করতে থাকি এবং উৎপাদিত দুগ্ধ বাজারে বিক্রি করা শুরু করি। কিন্তু, আমার সামনে একটি বড় বাঁধা চলে আসলো যখন দেখতে পারলাম যে আমি মিল্ক ভিটা বা আড়ং এর মতো বড় কোম্পানিদের কাছে আমার খামারের দুগ্ধ বিক্রি করতে পারছি না। তাই আমি স্থানীয় বাজারেই বিক্রি শুরু করলাম। আমি সেখান থেকে ৩২-৩৭ টাকা প্রতি কেজি দরে দুধ বিক্রি করতে পারছিলাম। ব্যবসার অবস্থা মন্দ ছিল না। আমি ওপরওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম যে আমি জীবনে একটি লক্ষ্য পেয়েছি। কিন্তু ২০২০ সালে এসে আমার অবস্থান আবার পরিবর্তন হয়ে যায়।

যখন কোভিড-১৯ দেশের সবাইকে আতঙ্কিত করে ফেলে, তখন আমাদের ব্যবসাও মন্দার দিকে যেতে থাকে। আমাদের খামারের দুধ এবং গবাদি পশুর চাহিদা অনেক কমে যেতে শুরু করে। সেজন্য লোকসানের মধ্যে দিয়েই আমরা খামারের দুধ বিক্রি করেছি। অন্যদিকে গবাদি পশুর খাবারের দামও অনেক বাড়তে শুরু করে। যেটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে ওঠে। গবাদি পশুর খাদ্য ক্রয়ের জন্য সরকার আমাদের ভর্তুকি দিয়ে সাহায্য করেছিল এবং আমরা কোনও গবাদি পশু বিক্রি না করেই খামার চালাতে পেরেছি। তবুও, কষ্টের দিনগুলি এখনও আমাদেরকে নাড়া দেয়।

এখন যেহেতু বাজার আবার সম্পূর্ণ সক্রিয় হয়েছে, আমরা আবার আগের অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করছি। এরকম একসময়েই অক্সফাম ও লাইটক্যাসল পার্টনার্স আমাদের জীবনে প্রবেশ করে। তারা আমাদেরকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাহায্য করেছে এবং আমাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছে। বর্তমানে, আমাদের লক্ষ্য হল আমাদের ব্যবসা স্থিতিশীল করে আরও বর্ধিত করা।