আমি এই হাজারীবাগের মাটির সাথে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম এবং একটা সময় ছিল যখন হাজারীবাগ ও চামড়াশিল্প সমার্থক ছিল। তাই আমি এই লেদার ইন্ডাস্ট্রি দেখেই বড় হয়েছি। যদিও আমার পরিবারের কেউ এই সেক্টরে যুক্ত ছিল না, আমি কেনো জানি অনেক টান অনুভব করতে শুরু করি এই শিল্পের প্রতি।
১৯৮৪ সালে আমি একটি বায়িং হাউজের সাথে যুক্ত হয়ে এই ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখতে শুরু করি। কিছু বছর পরে আমি নিজের ব্যবসা দার করাই এবং কিছু ক্রেতাদের সাথে সম্পৃক্ত হই। এই বায়িং হাউজের ব্যবসা পুরোটাই রপ্তানি নির্ভর হাওয়ায় তাদের অর্ডারের উপর আমার ব্যবসা চলে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে আমার বাবার মৃত্যু আমার ব্যবসায় অনেক নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসে। তাই আমার পরিবারকে স্বচ্ছল রাখার জন্য আমি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হই। সেখানে আমি ১৯৯৭ পর্যন্ত কাজ করি কিন্তু পরে আবার আমি বায়িং ব্যবসায় ফিরে যাই।
যখন সব টেনারী হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে যেতে শুরু করল, তখন বাইরের থেকে অর্ডারও কমতে থাকল। তারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার সরিয়ে নিয়ে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের সাথে ব্যবসা শুরু করে। এর মূল কারণ ছিল সরবরাহকারীদের সময়মতো অর্ডার পৌঁছাতে না পারা। এই দুর্যোগের মুহূর্তে, একজন বন্ধুর মাধ্যমে আমি জাপান থেকে কিছু অর্ডার পাই যা আমার এই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তোলে। ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা প্রয়োজন ছিল তার সবকিছুই আমি আগে থেকেই জানতাম। আমি জানতাম কোন লেদার গুলো ভালো এবং কোনগুলোর চাহিদা বেশি। তাই আমি ভাবলাম যে ব্যবসার মাধ্যমে নিজের মুনাফার পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে পারবো। কিন্তু নিজের আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি যে বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছে তা হলো আমার স্ত্রীর সাহায্য, যে কিনা একই সাথে আমার ব্যবসার সহযোগী।
বায়িং ব্যবসায় আমি যে খুব বড় কিছু সে কথা তো অবশ্যই বলতে পারবো না। আমি শুধুমাত্র ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে চুক্তি স্থাপন করতে সহায়তা করি। তাই দুই পক্ষের কেউ যদি হঠাৎ চুক্তি থেকে পিছপা হয়ে যায় তাহলে সব মালপত্র আমার কাছে থেকে যায়। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় যে বাজারের নিয়ন্ত্রন আমার অনুকূলে ছিল। যখন জাপান থেকে অনেক বেশি অর্ডার পেতে শুরু করি তখন আমি ইতালিতেও পণ্য রপ্তানি করতে থাকি।
যে ব্যবসাটা আমি ২০১৬ তে শুরু করেছিলাম, তা কোনদিক থেকে প্রজেক্ট নির্ভর ছিল না। যখনি আমি যে পরিমাণ অর্ডার পেয়েছি, তা যথা সময়ে পৌছে দেওয়ার মাধ্যমেই ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে গেছি। তাই আমাদের ব্যবসা পাকাপোক্তভাবে গড়ে উঠতে বেশ কিছু সময় লেগে গিয়েছিল। কিন্তু একটা ভালো বিষয় ছিল যে আমরা কোনো ঋণ না নিয়ে সবকিছুই নিজেদের অর্থায়নে করেছিলাম। কিন্তু আমাদের ভালো সময়ে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা। আমাদের একেবারে হাতে পাওয়া কিছু অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যায় কেননা রপ্তানি করার কোনো সুযোগ ছিল না। এর পাশাপাশি আরো আঘাত হানে লেদার ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিয়ত কমতে থাকা কর্মীর সংখ্যা। সেজন্যই নিজেদের কোনো অর্থ উপার্জন না থাকলেও কর্মীদের বেতন দিয়ে তাদের ধরে রাখতে হয়েছিল। আমরা কিছু অর্ডার স্থানীয় বাজারে পূরণ করেছিলাম কিন্তু সেটা শুধুমাত্র কর্মীদের বেতন ও ফ্যাক্টরির খরচ উঠাতে পেরেছিল। আমি এত কিছুর পরেও ফ্যাক্টরি বন্ধ করিনি।
এখন আমি মূলত আমার ব্যবসার গতিবিধি রপ্তানি ঘিরেই নির্ধারণ করতে চাচ্ছি। আমাদের নিজেদের রুজ নামে একটি ব্র্যান্ড ও আছে যেখানে আমরা ডেল ও এইচপি ল্যাপটপের ব্যাগ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী বানিয়ে থাকি। আরো বিনিয়োগ থাকলে ব্রান্ডটাকে আরো বড় করা সম্ভব। কিন্তু আপাতত আমাদের মূল লক্ষ্য আরো বেশি অর্ডার ও কাজ পাওয়া।