AHM Badal, Rangpur
বুনন কুটির লিমিটেড
1,334 Views

আমি কখনো ভাবিনি যে আমি একজন উদ্যোক্তা হব। আমি একটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনে ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে আমার স্ত্রীর চাকরির স্থানান্তর এবং আমাদের দুই সন্তানের দেখাশোনার কথা ভেবে আমি চাকরি করব কিনা সেটা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হয়েছে। । তখন থেকে নিজের একটা ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছিলাম। যেহেতু আমি ছোটবেলা থেকে সবুজের মাঝে থেকে তার সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেছি, তাই আমি আমার ব্যবসা কোন কৃষি পণ্য দিয়ে করার কথা ভাবলাম। তখনই আমার বন্ধু আমাকে একজন হস্তশিল্প উদ্যোক্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

সৌভাগ্যবশত, প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের মাধ্যমে, আমরা ইউরোপীয় কমিশন (ইইউ) কর্তৃক অর্থায়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম। আমাদের মতো মোট ১৫ টি প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তাবিষয়ক এবং কারিগর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিল। একাধিক প্রশিক্ষণ সেশনের পর, আমি অনেক কৃষি উপকরণ নিয়ে গবেষণার পরে আমাদের ব্যবসার মূল উপাদান হিসেবে পাটকে বেছে নিয়েছিলাম। যদিও অনেক পাটশিল্প উৎপাদনকারী তাদের উৎপাদনের জন্য সিনথেটিক কাপড় এবং উপকরণ ব্যবহার করেন, আমরা শুধুমাত্র উচ্চ মানের পাট কাপড় ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

আমরা চেয়েছিলাম আমাদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করতে। সেই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে, আমরা ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার দখল করার জন্য ম্যাট ও পাপশ দিয়ে আমাদের উৎপাদন শুরু করি। কিন্তু, সমস্যা হয়ে যায় অর্ডারের পরিমাণে। কেননা আমরা তখনও বড় সাইজের কিছু বানানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। প্রাথমিকভাবে তাই আমাদের একটু সময় লেগেছিল সবকিছু গুছিয়ে নিতে। আস্তে আস্তে, আমরা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমাদের উৎপাদন বাড়িয়েছি এবং রংপুরে আমাদের কারখানা তৈরি করেছি। এছাড়াও, আমরা আমাদের পণ্য এবং পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে গবেষণা ও উন্নয়ন শাখাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।

২০১৯ সালে, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রাইভেট কোম্পানি হিসাবে “বুনন কুটির লিমিটেড” প্রতিষ্ঠা করি। ঠিক সেই বছরের শেষে, আমরা আমাদের কোম্পানির কিছু শেয়ার ট্রুভালুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছি আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য। আন্তর্জাতিক সংযোগ ও বৃহৎ পরিসরে আমাদের পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিই। আমরা ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ট্রেড অর্গানাইজেশনেরও সদস্যপদ লাভ করি। তাদের সহায়তায় আমরা ইউরোপ এবং আমেরিকায় কিছু বিশ্বাসযোগ্য ক্রেতা খুঁজে পাই। এর পাশাপাশি, আমরা জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও আমাদের পণ্য রপ্তানি করি।

যখন মহামারী বাংলাদেশে আঘাত হানে, আমাদের রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে একটি। যেহেতু আমাদের প্রধান টার্গেট রপ্তানি বাজার, তাই লকডাউনের বাঁধা আমাদের জন্য অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। আমরা আমাদের মুনাফাকে বিনিয়োগ হিসেবে ব্যবহার করেই আমাদের ব্যবসা দাঁড় করাই। কিন্তু মহামারী বিনিয়োগের সেই চক্রকে বাঁধাগ্রস্থ করে দেয়। বর্তমানে অবস্থা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত আমাদের কাছে ব্যাপক অর্ডার রয়েছে যা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাই আমরা আশা করছি আমরা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হব।

লাইটকাস্টল পার্টনার্স এবং টিএফও কানাডার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা অনেক শিক্ষণীয় ও সময়োপযোগী ছিল। আমি বাজারের অনেক কৌশল এবং পরিবেশ বান্ধব উৎপাদনের উপায় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করার সুযোগও পাই। ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ট্রেড অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন, কারিগরদের ন্যায্য মজুরি সম্পর্কে আমরা সবসময় সোচ্চার থাকি। আমরা আশা করি যে আমাদের পণ্যগুলির মাধ্যমে আমরা বিশ্বের কাছে আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরব।