আফরোজা সুলতানা, ঢাকা
ফৌজিয়া হেলদি ফুড প্রোডাক্টস
837 Views

উদ্যোক্তা হিসাবে আমার উত্থান হয় ২০১৪ সালে যখন আমার স্বামীকে অসুস্থতার জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। আমার ব্যবসা করার সুযোগ সবসময়ই ছিল কিন্তু কখনও কিছু করা হয়ে উঠেনি বিভিন্ন কারণে। কিন্তু আমার স্বামী চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে সে আমাকে অনেক সাহস ও অনুপ্রেরণা দিল যেন আমি খাদ্যবিষয়ক কিছু শুরু করি। টাঙ্গাইলের মেয়ে হিসেবে আমি ভালো দই-মিষ্টি আগে থেকেই বানাতে পারতাম, তাই দই দিয়েই আমি আমার ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করি। আমার মেয়ের নামে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম রাখি “ফৌজিয়া হেলদি ফুড প্রোডাক্টস”।

সর্বপ্রথমে আমাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য  মোহাম্মদপুরের স্বপ্ন সুপারশপের আউটলেটে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের পণ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের আউটলেটে পরিবেশন করে। প্রথম থেকেই আমরা অনেক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কিন্তু আমরা তখনও ব্যবসা কিভাবে করতে হয় তার ব্যাপারে একদমই অভিজ্ঞ ছিলাম না। তাই আমরা সময় নিয়ে ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র জোগাড় করি। পরবর্তীতে আমরা আগোরার সাথে কাজ করার সুযোগ পাই কিন্তু তার জন্য আমাদের কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছিল।

তাদের নিয়ম মেনে আমাদের আলাদা অফিস ভাড়া নিয়ে সেটাকে আমাদের পণ্য প্রস্তুতকারী ফ্যাক্টরী বানাতে হয়েছিল। এর পাশাপাশি আমরা একটি ডিপ ফ্রিজার ভাড়া করেছিলাম যেন আমাদের দই ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারি। যখন আমরা আগোরার সকল প্রোটোকল মেনে উৎপাদন করা শুরু করি, তখন তারা ৪ টি শাখায় আমাদের পণ্য তালিকাভুক্ত করে। আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথম মাস শেষে আমাদের ৬৫,০০০ টাকার দই বিক্রি হয়ে যায়। এই সাফল্য আমাদেরকে আরও উৎসাহিত করে আরও দূরে এগিয়ে যাওয়ার।

পরের কয়েক বছর আমাদের সবকিছু ভালভাবেই আগাচ্ছিল এবং আমাদের গ্রাহকরাও আমাদের পণ্য সম্পর্কে কোন অভিযোগ করেনি। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে আমদের বিগত দুইবছরে অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। মহামারীর কারণে আমাদের ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। আমাদের পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং বিক্রি অনেক কমে গিয়েছিল। তাই আমাদের কিছু কর্মীদেরকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। বরং আমরা বোরহানি, মোজারেলা চিজ, চম চম, রসগোল্লা, তোফু ইত্যাদির মতো নতুন পণ্য এনে আরও বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের মিষ্টান্ন সবার কাছে আরও সহজে পৌঁছে দিতে অনলাইন ডেলিভারি শুরু করা হয় এবং এর ফলে বিক্রি আবার বাড়তে থাকে।

উইকানেক্ট ও লাইটক্যাসল পার্টনার্স আয়োজিত “কর্পোরেট কানেক্ট ২০২০ কনফারেন্স এন্ড বিজনেস ফেয়ার” আমার জন্য অনেক শিক্ষণীয় ছিল যেখানে আমি উদ্যোক্তা দক্ষতা এবং বিপণন কৌশল সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারি। আমি সেখানে পিচ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করি। এখন আমার লক্ষ্য হল গ্রামীণ মিষ্টিজাতীয় পণ্য শহরে আরও পরিচিত করার মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যদি আমার সাথে এই বিষয়ে একসাথে কাজ করে তাহলে নিশ্চয় খুব শীঘ্রই আমি এটি বাস্তবায়ন করতে পারব।

আফরোজা সুলতানার সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ফুড প্রোডাক্টসের মাধ্যমে সবার মাঝে খুশি ছড়িয়ে দিয়ে স্বাবলম্বী নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণামূলক গল্প।