Md. Tauhedul Islam Shahazada
প্রান্তজন এগ্রো এন্টারপ্রাইজ
1,745 Views

প্রান্তজন এগ্রো এন্টারপ্রাইজের পিছনে অনুপ্রেরণা এসেছে গ্রামীণ মানুষদের জন্য কাজ করার ইচ্ছা থেকে। ২০০৪ সালে প্রান্তজন ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয়। একটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন হওয়ায় আমরা স্থানীয় কৃষকদের সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন দাতা, সংস্থা, যেমনঃ অক্সফামের সাথে কাজ করেছি। কিন্তু, আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে হবে। আমাদের বেশ কয়েকবছর সময় লেগেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি এন্টারপ্রাইজ তৈরির মাধ্যমে নতুনভাবে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি।

২০১৪ সালে, প্রান্তজন এগ্রো এন্টারপ্রাইজ একটি অভিনব বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাজা কৃষি পণ্য প্রচার ও বিক্রির কাজ শুরু করে। এন্টারপ্রাইজের প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রান্তোজান ট্রাস্টের সাথে জড়িত থাকা মানুষদের হাত ধরেই এসেছে। শুরুতে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করতে আমাদের কিছু অসুবিধা হয়েছিল। তবে এটি শীঘ্রই ভালভাবে কাজ করেছে কারণ আমরা আমাদের পরিকল্পনা তাদেরকে ভালোভাবে বোঝাতে সক্ষম হই। আমরা আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে কৃষি পণ্যের জন্য প্রযুক্তিগত এবং বিপণন সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করি।

বর্তমানে, আমাদের এন্টারপ্রাইজ মুগ ডাল, শসা, করলা, বেগুন, মিষ্টি-লাউ ইত্যাদি তাজা কৃষি পণ্য নিয়ে প্রায় ৫০০০ কৃষকদের সাথে কাজ করছে। কৃষকরা আমাদের কাছে তাজা এবং নির্ভেজাল পণ্য বাজার দরে বিক্রি করে। আমরা পরবর্তীতে সেসব পণ্য স্থানীয় বাজারে ও বরিশালের বাইরে বাজারজাত করি। আমরা দেশী নামে একটি স্থানীয় ব্র্যান্ড তৈরি করেছি, এবং এর অধীনে, আমরা এই পণ্যগুলি বিভিন্ন দোকানে এবং পরিবারের কাছে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করি। হোম ডেলিভারির জন্য দারাজের সাথে আমরা ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ আছি এবং ফুডপান্ডার সাথে আমাদের ট্রেডিং রেজিস্ট্রেশন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।

ফসল এবং সবজি ছাড়াও, আমরা কাঁচা দুধ বিক্রির জন্য ৫০০ জন খামার মালিকের সাথে কাজ করি। এর জন্য আমাদের একটি ফিলিং প্ল্যান্ট আছে যেখানে সকাল ৮-৯ টার মাঝে কাঁচা দুধ চলে আসে। আমরা সেটা ঠাণ্ডা করার পরে প্যাকেটজাত করে স্থানীয় সুপার শপ, স্টোর, বাসা-বাড়িতে পাঠিয়ে দেই দেশি ব্র্যান্ডের অধীনে। আমরা সকল প্রস্তুতকারকদের সর্বোচ্চ মূল্য পেতে সাহায্য করার পাশাপাশি পণ্যের সর্বোত্তম গুনগত মান নিশ্চিত করি।

যেহেতু কৃষি পণ্যের উৎপাদন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন আবহাওয়া, মাটির অবস্থা ইত্যাদি, আমাদের বিক্রয় আয়ের নির্দিষ্ট তথ্য বলা কঠিন। আনুমানিক হিসাব মোতাবেক, এক মাসে ডালের বিক্রয় থেকে প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা আয় আসে যদি সব ভাল থাকে। এবছর আমাদের লক্ষ্য হল নিট মুনাফার মার্জিন ১২% ও প্রবৃদ্ধি মুনাফার মার্জিন ১৯% রাখা। কিন্তু, গতবছর আমাদের সকল পরিকল্পনা বিফলে চলে গিয়েছিল।

মহামারী পরিস্থিতি আমাদের সবাইকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত করে দিয়েছিল। আমাদের বেশ কয়েক বছরের কাজের অভিজ্ঞতায়, আমরা আগে কখনও এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হইনি। আমরা প্রথমে কাজ বন্ধ রেখে সার্বিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি। কিন্তু এরমধ্যেই ডালের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চাহিদা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। কারণ ডালের চাহিদা বিভিন্ন সভা, অনুষ্ঠান, বিয়ে, ইত্যাদির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে যা করোনার জন্য পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কাঁচা দুধের চাহিদাও কমে গিয়েছিল কারণ সবাই ঠাণ্ডা দুধ কিনতে অনীহা প্রকাশ করছিল করোনা সংক্রমণের ভয়ে। এরকম কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আমাদের জন্য সহজ ছিল না।

কিন্তু এই প্রতিকূলতা আমাদের মনোবল ও আমাদের কার্যক্রমকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আমরা এসময়ে অনলাইন ব্যবসার দিকে মনোযোগ দেই। আমরা দারাজের পাশাপাশি স্থানীয় অনলাইন ই-কমার্স  প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেরিওয়ালা ডট কম এর সাথেও কাজ করছি। করোনার জন্য অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হলেও এই সুবাদে আমরা অনলাইন মাধ্যম সম্পর্কে আরও সজাগ হওয়ার সুযোগ পেয়েছি।

লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও অক্সফাম একসাথে একটি বিনিয়োগ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল, যেখানে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। প্রকল্পটি আমার মতো অনেক উদ্যোক্তাকে সাহায্য করেছে। আমি সেই প্রকল্প থেকে কিছু প্রযুক্তিগত দক্ষতা শিখতে পেরেছি। এখন, আমরা আমাদের এই জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রামীণ কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য আমরা এখন বরিশালের বাহিরে আমাদের কার্যক্রমকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। এতো বাঁধা-বিপত্তির পরেও, আমরা প্রান্তিক মানুষের জীবন পরিবর্তন এবং তাদের যাত্রায় তাদের সমর্থন করার মাধ্যমে অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই।