পিউ ডেইরি ফার্ম
1,816 Views

২০১৪ সালের দিকে আমি চাকরির চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোনো ভাল চাকরির সন্ধান পেলাম না। আমার বড় ভাইয়ের গরুর খামার করতেন। তার ব্যবসা বেশ লাভজনক ছিল। তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও নিজের গরুর খামার করারর কথা ভাবলাম। বাবার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি গরু কিনলাম। সেই থেকে আমারও এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যাওয়া। 

বলতে গেলে খামারটি আমাদের পারিবারিক ব্যবসার মতই বড় হতে লাগল। আমার বড় ভাই আমাকে খামার শুরু করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন। তার নিজের খামার থাকার কারণে তিনি ব্যবসাটি বেশ ভালভাবে বুঝতেন। কখন কিভাবে কাজ করলে লাভবান হওয়া যাবে এসব বিষয়ে তিনি আমাকে পরামর্শ দিতেন। আমার ভাইয়ের সহায়তার কারণে আমার ব্যবসার শুরুতে তাই তেমন গুরুতর সমস্যার মুখে পড়তে হয় নি। আর যেকোনো কাজে আমার ছোট ভাইয়ের সাহায্য পেতাম। তাই অন্য কর্মচারী রাখার প্রয়োজন পড়েনি। মূলত আমার মূল ব্যবসা ছিল দুধ বিক্রি। মাঝে মাঝে বাজার বুঝে হাটে গরুও বিক্রি করতাম।

আমি শুরু করেছিলাম দুইটি গরু দিয়ে, আস্তে আস্তে গরুর সংখ্যা বেড়ে ছয়টি গরু হয়। আমি অক্সফ্যাম থেকে ট্রেনিং নিয়েছিলাম যা আমার ব্যবসার বৃদ্ধিতে আমাকে আরো সাহায্য করেছিল। তারপর আমি লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর ট্রেনিং -এও অংশ নেই৷ তাদের ট্রেনিং থেকে আমি ব্যবসা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানতে পারি। ব্যাংকের কাগজপত্র প্রস্তুতের ব্যপারেও বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করি। পরবর্তীতে আমার ব্যাংকের লোন নেওয়ার প্রচেষ্টায় আমাকে এসকল ট্রেনিং ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছিল। আমার জমির খারিজ এর কাগজ তৈরি হলে আমি লোন এর জন্য আবেদন করতে পারব। এক কথায়, আমার ব্যবসা বেশ সুন্দর ও  স্থিতিশীলভাবে চলছিল। আমি আস্তে আস্তে একটা ভাল পর্যায়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মহামারি করোনা সবকিছু নষ্ট করে দেয়।

করোনায় লকডাউনের কারণে সব ধরণের পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। সাথে আমার খামারের পণ্যের চাহিদাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গরুর খাবার আনাও দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। আমি বুঝতে পারি মহামারিতে খামারের ব্যবসায় লাভ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। আমি গরুর সংখ্যা কমিয়ে একটিতে নিয়ে আসি এবং গরু পালন বন্ধ রেখেছি। আমার আয়ের অন্য উৎসের প্রয়োজন ছিল। আমার বড় ভাইয়ের একটি মুদির দোকান ছিল। তার অন্যান্য আরো ব্যবসা থাকায় তিনি মুদি দোকানে সময় নিতে পারছিলেন না। তিনি আমাকে দোকানটির দায়িত্ব নিতে বলেন। তাই আমি খামার থেকে বিরতি নিয়ে মুদি দোকানটি চালানো শুরু করলাম। আমার সুসময়ে হোক, দুঃসময়ে হোক, আমার পরিবারের সবাই সবসময় আমার পাশে ছিলেন। আমার পরিবারই আমার সামনে এগোবার সবচেয়ে বড় শক্তি।

গরুর খামারে খাটানোর জন্য আমার কিছু নগদ অর্থ জমা ছিল। গরুর খামার এর অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় আমি আর এতে বিনিয়োগ করছিলাম না। যেকোনো ব্যবসার মূল উদ্দেশ্যই থাকে সেই ব্যবসা থেকে লাভ করা। লাভ হবেনা জেনেও একই ব্যবসায় টাকা খাটানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অন্যদিকে টাকা ঘরে ফেলে রাখলে তাতেও কোনো আয় হবেনা। তাই আমি সেই অর্থ মুদির দোকানে বিনিয়োগ করেছি। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ নিয়ে বর্তমানে আমার দোকান বেশ ভালভাবে চলছে। পাশাপাশি আমাদের প্রায় চার বিঘার মত জমিতে পেয়ারা বাগানও শুরু করেছি। এই পেয়ারা বাগানের ব্যবসা থেকেও আমি লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি। তবে খামারের ব্যবসায় আমার পুনরায় ফেরত আসার ইচ্ছা আছে। আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার গরুর খামারের ব্যবসা চালু করতে চাই। সবকিছুই নির্ভর করছে লকডাউনের অবস্থার উপর। আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের কামনা করি।