আমি বিশ্বাস করি যে প্রকৃতির নিয়ামতের সাথে সংযুক্ত না থেকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। আর একজন উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা আসে এই বিশ্বাস থেকেই। আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে আমাদের লোকালয়ের মানুষের খাদ্যতালিকায় নির্ভেজাল খাদ্যের প্রবর্তন দরকার। কিন্তু সেটা করার জন্য আমার প্রথমে সবার মাঝে সহজলভ্য উপায়ে তা পৌঁছে দিতে দিবে। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্যই নিখাদ প্রকৃতির সূচনা।২০১৪ সাল থেকে, নিখাদ প্রকৃতির মূল উদ্দেশ্য ছিল মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে প্রত্যেককে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সাথে পরিচিত করে দেওয়া।
আমরা দেশি ও তাজা খাদ্য এবং সবজি দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করি। প্রথম থেকেই আমাদের কিছু বাঁধার মুখোমুখি হতে হয়। নোয়াখালীর পরিবেশ সবধরনের ফল ও শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত না হওয়ায় আমরা প্রান্তিক মানুষদের কাছে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারিনি। তারপরও, অন্যান্য এলাকা এবং জেলা থেকে আমরা পুষ্টিকর উৎপাদন যেমনঃ ধান, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করি। আমাদের লোকালয়ে ও ধরনের উদ্যোগ একদম নতুন হওয়ায় চাহিদা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু আমরাও হাল ছাড়ার পাত্র নই।
আমাদের পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় তা সবার কাছে পৌঁছানোর আগে নিখাদ পণ্য সম্পর্কে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবতে শুরু করি । তাই, যারা প্রতিদিন রান্না করেন তাদেরকে আমরা রন্ধনপ্রণালি সম্বন্ধে আরও জানার সুযোগ করে দিই। রান্না করা একটি শিল্প, এবং কেউ যদি সঠিক নিয়ম এবং রান্নার পদ্ধতি অনুসরণ না করে তবে সে খাবার থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টি পাবে না। এই কারণেই আমাদের লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার উপভোগ করার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে যেন সকলে অবগত করতে পারি। আমাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে এখন পর্যন্ত অনেক নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেছেন।
যখন আমাদের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, তখনি করোনা মহামারী দেশে আঘাত হানে। দেশব্যাপী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সামনে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসে যায়। যেহেতু আমাদের অনেক পণ্য অন্য জেলা থেকে আসত তাই আমাদের ব্যবসা অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছিল। আমাদের সুন্দরবন থেকে আনা খাঁটি মধুর সরবরাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর পাশাপাশি গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় আমাদের বিক্রি অনেক কমে গিয়েছিল। তবুও, আমরা ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী কারণ আমরা চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সবুজ ও নিখাদ পরিবেশে বড় হয়ে উঠুক।
আমি চট্টগ্রামে লাইটক্যাসল পার্টনার্স আয়োজিত রোডশো থেকে ব্যবসায়িক নেতৃত্বের ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পেরেছি এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গিও নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাই আমি মন থেকে এই ধরনের কর্মসূচির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতের পরিকল্পনার জন্য আমরা এখন তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চাই কেননা তারাই পারবে একটা সবুজ ও নির্মল আগামী গড়ে তুলতে। যদি তারা স্বাস্থ্যকর খাওয়ার পদ্ধতি এবং কৌশলগুলি রপ্ত করতে পারে তাহলে আস্তেআস্তে সকলেই তাদের থেকে অনুপ্রাণিত হবে। সুতরাং, আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল আমাদের নিখাদ প্রকৃতির মাধ্যমে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ মানুষের মাঝে গড়ে তোলা।