এস এম এল মেটাল
1,235 Views

মাত্র ক্লাস ১ এর গণ্ডি পেরিয়েই আমার পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে রিযিকের সন্ধানে কাজ করতে হয়েছিল। আমি অনেক ধরনের ইন্ডাস্ট্রি এবং সেক্টরের সাথে যুক্ত হয়ে খুবই মিশ্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু শেষে এসে লাইট-ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিতে একটি ভালো চাকরি পেয়ে এখনই আমার ঠাই হয়।

আমি যখন প্রথম সেই ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করলাম, তখনও আমার কল্পনাতেও ছিলনা যে আমি কখনো নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবো। যতদিন যাচ্ছিল, আমি আস্তে আস্তে আরো দক্ষ হয়ে উঠলাম এবং আশেপাশের মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়তে থাকলাম যা আমাকে স্বাধীনভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু এতকিছুর পরেও আমি সংশয়ে ছিলাম কারণ আমার পরিবারে চারজন ছেলেমেয়ে যাদেরকে আমার দেখেশুনে রাখার দায়িত্ব সবার আগে ছিল। সেরকম দুশ্চিন্তার সময়ে আমার পরিবার আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে আগ্রহী করেছিল। আমার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে কেননা তারা নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দেয়। সেই বিনিয়োগ দিয়েই আমি ১৯৯২ সালে এস এম এল মেটাল প্রতিষ্ঠা করি।

শুরু থেকেই,  এস এম এল মেটাল এর প্রধান ফোকাস ছিল মেশিনারি উপাদান যেমন: ব্রিক বার্নার ও টিউব ওয়েল সরবরাহ করা। বাহির থেকে দেখলে, ব্যবসাটা অনেক সাদামাটা মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক সমস্যার জাল বিছে আছে ভিতরে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাঁধা হলো উপযুক্ত মানুষকে খুঁজে বের করে তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ করা। কিন্তু তা প্রায় সময় মনমতো ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়না। যার ফলে আমার বর্তমান কর্মীদের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি হয় এবং উৎপাদন থেকে সরবরাহ, সকল সেক্টরেই খারাপ প্রভাব পড়ে।

পরবর্তী যে সমস্যা আমাদের মতো উদ্যোক্তা কে পীড়া দেয় তা হলো নগদ অর্থের ব্যবস্থাপনা। যেহেতু কাঁচামালের দাম কিছুদিন পরপরই পরিবর্তন হতে থাকে এবং ক্রেতাদের অভ্যাস ক্রেডিট দিয়ে পণ্য নেওয়ার, তাই আমাদের হাতে নগদ অর্থ আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়। যার কারণে আমরা মাঝেমাঝেই আমাদের প্রতীক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অপারগ হই।

এবং কোভিড -১৯ মহামারী এই নগদ অর্থের সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা এখন ভাড়া এবং বিল পরিশোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছি। তার উপরে, সমস্যাটি আমরা সাধারণত যে পরিমাণ অর্ডার পেয়ে থাকি তার সংখ্যাকেও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করেছে এবং এর পাশাপাশি আমাদের বর্তমান গ্রাহকরা দেনাও সময়মত শোধ করতে পারছেন না।  টিকে থাকতে এবং ব্যবসাকে সচল রাখতে, আমাকে ঋণ নিতে হয়েছিল এবং আমার ব্যবসাকে কিভাবে আরো ভিন্নরূপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার কৌশল সম্পর্কেও জানতে হয়েছিল।

লাইটক্যাসল পার্টনার্সের সাথে আমার পরিচয় হয় যখন তারা রংপুরে আমার কারখানা পরিদর্শন করতে আসে। তারা পণ্য বিপণন এবং স্থানীয় গ্রাহক বৃদ্ধিতে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এবং তাদের মাধ্যমে, আমি বি-স্কিলফুল প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলাম, যা আমাদের ব্যবসার উন্নতির জন্য ভালো কিছু কৌশলের সাথে পরিচয় করে দিয়েছে। এই উদ্যোগগুলি আমার ব্যবসাকে একটি নতুন দিকে মোড় নিতে এবং আমাদের মুনাফা বৃদ্ধিতে ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।  আমি আশা করি বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় আমার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারব এবং এমনকি অন্য দেশে রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।