দুটি সফল ব্যবসা গড়ে তোলার গল্প
850 Views

আমি উদ্যোক্তা জগতের নতুন সংযোজন নই কোনভাবেই। আমার কৃষি খাতের সাথে সম্পর্ক প্রায় ১৫ বছরের। এটা অবশ্যই সত্যি যে ১৫ বছর আগে আমি কোনভাবেই এতটা দক্ষ ছিলাম না। তখন আমার ব্যবসা নিয়ে জ্ঞান ছিল সামান্য। এমনকি আমি এটাও জানতাম না যে আমি কখনও ব্যবসা করব, তাও আবার এতো বছর ধরে! ১৫ বছর একটা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার মাধ্যমে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু, আমার ব্যবসার শুরু টা খুবই নির্মমভাবেই হয়েছে। আমার স্বামী অনেক গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। যার কারণে আমার নিজের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

তখনি আমি ভাবলাম যে আমার জন্য গবাদি পশুর ব্যবসা করা হয়ত সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। কেননা আমি এর আগে অনেক মানুষকে নিজেদের খামার বানাতে দেখেছি তাই আমার জন্য বিষয় টা নতুন ছিল না। তাই আমি সাহস জুগিয়ে কাজে লেগে পড়ি। আমি অস্বীকার করব না যে আমার জন্য পদক্ষেপটা অনিশ্চয়তা দিয়ে ঘেরা ছিল। কিন্তু তাও আমি শুরু করি এবং আমার বিক্রি হতে থাকে। যখন আমি দেখতে পেলাম যে আমার ব্যবসা একবারে পুরপুরিভাবে এগিয়ে চলছে, তখন আর পিছে ফিরে দেখার দরকার পড়েনি।

কিন্তু ৫ বছর পরে গবাদি পশুর ব্যবসা পরিচালনার পর, আমি নতুন কিছু করার কথা ভাবি। সে ভাবনা থেকেই আমি মরিচ চাষ শুরু করি। আর এটি করতে আমার খুব বেশি বেগও পেতে হল না কারণ আমি আগে থেকেই এই ব্যাপারে ধারণা নিয়ে রেখেছিলাম। তাই, ৫ বছরের মাথায় আমি দুই টা ভিন্নধর্মী পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করে ফেললাম। আমার গবাদি পশুর ব্যবসা থেকে আয় ভালই হচ্ছিল। তাই, আমার আর কোন আক্ষেপ  ছিল না। কিন্তু, কে জানত যে সামনেই এত আধারাচ্ছন্ন সময় অপেক্ষা করছে!

আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করে যখন আমার ছেলে মাত্র ক্লাস ৫ এ পড়ত। আমার ছেলের জন্য তাই ঘটনাটি মেনে নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কি করব এখন। তাও, আমি ও আমার ছেলে ধৈর্য ধরে আগাতে থাকলাম। সে ২১ বছর বয়সে আমার ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। তাই আমার জন্য ব্যবসায়িক দিক আরও সহজ হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য বেশিদিন থাকেনি।

২০২০ এর শুরু হল করোনার প্রকোপ দিয়ে। একদিকে মহামারীর কারণে মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছিল আর অন্যদিকে আমার ব্যবসায় প্রতিনিয়ত ক্ষতি হতে থাকল। মরিচের চাহিদা দিনদিন শুধু কমতেই থাকল এবং আমার গবাদি পশুর ব্যবসাও মন্দায় ডুবে যাচ্ছিল। কোনভাবেই আমি আমার পণ্যগুলো বাজারে নিয়ে যেতে পারছিলাম না। তাই আর কোন উপায় না দেখে আমার ৫০,০০০ টাকার ঋণ নিতে হয়েছিল। যদিও সেটা দিয়ে সব ঠিক হয়ে যায়নি তাও কোনভাবে আমরা মানিয়ে নিয়েছি।

করোনার পরে, আমার বাবা আমাকে একটি জমি দেয় যেন আমি আমার মরিচের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারি। অন্যদিকে, আমার ছেলে একটি ট্রাক কেনে যেন পশুর খাবার ও অন্যান্য মালামাল দ্রুত স্থানান্তর করার যায়। আমরা লাইটক্যাসল পার্টনার্সের ও অক্সফামের সাথেও পরিচিত হই যারা আমাদেরকে অনেক সহায়তা করেছে। এখন, আমি আস্তে আস্তে আমার ব্যবসা পুনর্নির্মাণ করছি এবং আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করছি।