Md. Ashikur Rahman, Rangpur
একজন তরুণ মৎস্য উদ্যোক্তার গল্প
853 Views

আমি একদম ছোটবেলা থেকেই মাছচাষের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম আমার বাবার পেশার কারণে। আমরা সততা ও নিষ্ঠার সাথে আমাদের সকল কাজ করে থাকি। আমার বাবার ব্যবসাই মূলত আমাকে অনুপ্রাণিত করে মৎস্যশিল্পের সাথে জড়িত হওয়ার জন্য। তাই, মাত্র ১৪ বছর থেকেই আমি পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে পুরো মনোযোগ এ খাতে দিতে শুরু করি। এভাবেই তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আমার যাত্রা শুরু হয়।

প্রথমদিকে, আমরা মাছ চাষ না করে আড়ত থেকে মাছ পাইকারি দামে কিনে তা বাজারে বিক্রি করতাম। আস্তে আস্তে মৎস্যচাষ সম্পর্কে আরও অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করার পরে কালচার করা শুরু করি আমার জমানো টাকা দিয়ে। ২০১৪ সালে, ২০,০০০ টাকা দিয়ে ৩ বছরের জন্য একটি পুকুর ধার নিই। অনেক ভয় ও সংকোচের সাথেই আমি সাবধানতা অবলম্বন করে পোনা ছাড়ি। প্রথমবারেই উৎপাদন খুবই ভালো ছিল এবং অনেক লাভ পাই। এটা আমাকে আরও ভালোভাবে সবকিছু করার জন্য উৎসাহ যোগাল।

কয়েকবছর পরে আমি সিদ্ধান্ত নিই আমার ব্যবসা আরও বড় করার। সে ভাবনা থেকেই আমি একটি ফিডের দোকান দেই। দোকানের থেকেও যে পরিমাণ মুনাফা আসছিল সেটাও সন্তোষজনক ছিল। মাসে প্রায় ১০-১৫ টন মাছের ফিড ও ৮-১০ টন পোলট্রি ফিডের অর্ডার পেয়ে থাকি। অন্যদিকে আমার ধার করা ৮ টি পুকুরের মধ্যে ৫ টি আমি কিনে নিই এবং মাছচাষে আরও বৈচিত্র্য আনতে শুরু করি। ব্যবসার সবদিক আল্লাহর রহমতে খুব ভালভাবেই যাচ্ছিল।

কিন্তু আমার ব্যবসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল করোনা। বিগত দেড় বছরে আমার অনেক ক্ষয়-ক্ষতির মুখ দেখতে হয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে অর্ধেক মাসেই আমার প্রায় ৬০,০০০ হারাতে হয় পোলট্রি ফিডের অভাবে। আমার ভাগ্য ভালো যে মাছের বাজার অনেকাংশেই স্থিতিশীল ছিল। আমি পোনা আর মাছ বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছিলাম। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে আমার পরিস্থিতি খুব বেশি নেতিবাচক দিকে যায়নি।

আমি এখনও অন্য উদ্যোক্তাদের তুলনায় অনেক কমবয়সী হওয়ায় সবসময় চেষ্টা করি বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা ট্রেনিং কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে। লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও ওয়ার্ল্ডফিশ এর পক্ষ থেকে আমি ব্যবসায়িক চিন্তাধারা সম্পর্কে আরও জানতে ও বুঝতে পেরেছি। অল্পসময়ের মাঝেও তারা কিভাবে আরও গুছিয়ে উৎপাদন করতে হয় তার একটি স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। এখন আমি একটি ৮ একর ও একটি ১০ একর পুকুর ধার নিয়ে আমার মাছচাষ আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছি। এর পাশাপাশি আমি মাছ সংগ্রহের জন্য একটি আড়ত ভাড়া নেওয়ার কথাও ভাবছি। যদি সব ভালোভাবে চলতে থাকে তাহলে আশা করি খুব শীঘ্রই এসব বাস্তবায়ন করতে পারব।