Akmal Hosain
একজন উদ্যোক্তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
937 Views

২০০৩-০৪ সালে আমি রংপুরে একটি ব্যবসা শুরু করি।  কিন্তু, আমার সে উদ্যোগের আশানুরূপ ফল পাইনি। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে এরকম বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া আমার জন্য সহজ ছিল না। তাই, আমি ব্যবসা  ছেড়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আমার কর্মজীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। যার সুবাদে আমি রাজধানীসহও আরও অনেক শহর ও লোকালয়ের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ২০১৭ তে এসে, কিছু পারিবারিক কারণে আমি আবার আমার গ্রামে ফিরে আসি। সেই সময়, একজন খুব কাছের বড় ভাই এবং স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা আমাকে নার্সারি ব্যবসায় প্রবেশের পরামর্শ দিলেন। ব্যবসার ঝুঁকি এবং পরিণতি জানা সত্ত্বেও, আমি আবার সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলার আত্মবিশ্বাস পাই। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার পুনর্জন্ম এভাবেই হয়েছিল।

নার্সারি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছাড়াই। আমার পরম সৌভাগ্য যে সেই পরিচিত ভাই এবং আরও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তারা আমাকে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়াও, একটি স্থানীয় ফাউন্ডেশন আমাকে বিনিয়োগে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিল। তাদের সাহায্য এবং ২৫০,০০০ টাকার বিনিয়োগে আমি নার্সারি স্থাপন করি। আমি জানতাম যে সবকিছু পরিচালনা করা সহজ হবে না, কিন্তু তবুও, আমি আবার আমার উদ্যোক্তা যাত্রা শুরু করার জন্য উৎসাহিত ছিলাম।

প্রথমে সবকিছু মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। সতেজ বীজ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে গাছপালা পরিচর্যা করা পর্যন্ত – সকল ধাপেই অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু খুব দ্রুতই আমি সবকিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করলাম। পরবর্তী বছরেই আমার নার্সারির ফলন অনেক ভাল হয়। আমার সাফল্য আমাকে আমার নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি সার এবং ওষুধ নিয়ে কাজ করার সাহস যোগায়।

বেগুন, টমেটো, কুমড়া, বাঁধাকপি, আলু, পেঁপে এবং অন্যান্য অনেক সবজির উৎপাদন আমার নার্সারিতে ভাল হয়। ২০১৭ সালে আমার খামার থেকে যা ফসল এসেছিল, তা দিয়ে আমার লাভের পরিমাণ সন্তোষজনক ছিল। ২০১৮ সালে আমার নার্সারিতে পোকামাকড়ের উৎপাত দেখা দেয় যার কারণে ফলনে কিছু ঘাটতি দেখা দেয়। সৌভাগ্যবশত আমার তেমন বিশেষ ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বড় ধাক্কা আসে ২০২০ এর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে। আমার নার্সারি ঘিরে রাখা সব জাল এবং গাছপালা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যাইহোক, আমি পুনরুদ্ধারকৃত কিছ চারা দিয়েই সেই বছরের উৎপাদন চালিয়ে যাই।

একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা, অন্যদিকে করোনা মহামারী। বাজারে শাকসবজির চাহিদা কমে গিয়েছিল এবং মালামাল সরবরাহ বা পরিবহনেও অনেক বাঁধা চলে এসেছিল। এসময়টা আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই কষ্টের ছিল। কিন্তু, আমি দমে না যেয়ে ব্যবসার সকল দিক সামলিয়েছি। এখন, যেহেতু সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে, আমি আশা করছি খুব শিগ্রই আবার ভাল দাম পাওয়া শুরু করব।

এতো বছর ধরে, আমি বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং সেমিনারে অংশ নিয়েছি যেন আরও জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। ২০১৯ সালে, আমি রংপুরে লাইটক্যাস্টেল পার্টনার্সের একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। তারা আমাকে ব্যবসায়িক অর্থায়ন এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও বুঝতে সাহায্য করেছে। এমন অভিজ্ঞতা পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। বর্তমানে, আমার ড্রাগন ফল, মাল্টা ইত্যাদি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যোগ করে আমার নার্সারিতে আরও বৈচিত্রতা আনার পরিকল্পনা করছি। যেহেতু এধরনের ফলগুলো আমার এলাকায় ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় না, তাই এখান থেকে বেশি লাভ করার সুযোগ আছে। এছাড়াও, আমি আমার নার্সারি বড় করার চিন্তা করছি। আমি জীবনে দ্বিতীয়বার উদ্যোক্তা হিসেবে পথ খুঁজে পাওয়াও এখন নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনুভব করি নতুন কিছু করার।