আব্দুল্লাহ মৎস্য এন্ড পোল্ট্রি ফার্ম
1,074 Views

আমি একজন ট্রিপল ই ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম।  তোশিবা কোম্পানিতে আমি দশ বছর চাকরি করেছি। চাকরিটি বেশ একঘেয়ে ছিল। এক পর্যায়ে আমি ক্লান্তিবোধ করা শুরু করি। আমার মনে নিজের কিছু তৈরি করার সুপ্ত বাসনা সবসময়ই ছিল। অবশেষে আমি চাকরি ছেড়ে একটি অ্যাডভারটাইজিং ফার্ম চালু করি। এই ধরণের সংস্থাগুলিতে বড় রকমের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, যা আমার ছিল না। তাই আমার ব্যবসার ভিত্তি দুর্বল ছিল। এই সেক্টরে সফলতা আনা ছিল একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে আমি আমার ব্যবসাকে সফল করে তুলতাম, কিন্তু মহামারির কবলে পড়ে সেই আশা ভঙ্গ হয়ে যায়। 

মহামারিতে আমার ফার্মের ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হয়। বাধ্য হয়ে আমি ব্যবসা গুছিয়ে আমার সমস্ত কিছু নিয়ে ঢাকা ছেড়ে রংপুরে আমার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। এখানে আমার দাদার আমলের বেশ বড় পুকুর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমি এই পুকুরে মাছ চাষ করার কথা ভাবি। সত্যি বলতে, এই পরিকল্পনা আমার শুরু থেকেই ছিল। আমি অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রগুলো চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলাম। তবে আমার মাথায় ছিল যে, একেবারেই যদি কোন কিছু কাজ না করে, তবে আমি এখানে একটি মাছের খামার শুরু করব।

আমার জন্মেরও আগে আমার বাবা এই পুকুরে মাছ চাষ করতেন। তবে, তিনি এটিকে কখনো বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাননি বা নেওয়ার চেষ্টা করেননি। ২০২০ সালের মে মাসে, আমি আবদুল্লাহ মৎস্য এবং পোল্ট্রি ফার্ম শুরু করি। আমি আমার ফার্মে রুই, মৃগেল, কাতলা, বাটা, স্বরপুটি ইত্যাদি মাছ চাষ করি। ৪-৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ নিয়ে আমার মাছের ব্যবসা শুরু।

আমি আগে কখনো মাছ চাষের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম না, তাই এ বিষয়ে আমার জ্ঞানের পরিধি ছিল ক্ষুদ্র।  তারপরে আমার পরিচয় হয় ওয়ার্ল্ড ফিশের সাথে। আমি তাদের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে যোগ দিলাম। তাদের কাছ থেকে মাছ চাষ সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করলাম। এটি আমার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। তাদের মাধ্যমে, আমি লাইটক্যাসল পার্টনার্স আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছি। সেখানেও আমার বেশ সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা হয়। তাদের কাছ থেকে ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন নিয়মনীতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি যা আমার ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। কেবল এক বছর যাবত আমি আমার ব্যবসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে আমি আশাবাদী আমার ব্যবসার আরো অনেকটা পথ পেরোনো বাকি।

কোভিড-১৯ আমার ব্যবসার শুরুর দিকে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। গত বছর মে মাসে আমি কেবল আমার প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলাম। সেই মুহূর্তে আমি মাছের পোনা কিনে চাষ করা শুরু করেছিলা। এর জন্য মাছের খাবার এবং হরমোন যোগাড় করা অত্যাবশকীয় একটি ধাপ। লকডাউনের কারণে, মাছের খাবার এবং হরমোনগুলির দাম ছিল আকাশচুম্বি। আমি যে খাবার বর্তমানে ১২০০ টাকায় কিনতে পারছি, গত বছর  সেটি ২০০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল I খুব সম্প্রতি আমি বড় মাছ বিক্রি শুরু করেছি এবং আমি বিশ্বাস করি মাছের ব্যবসা লাভজনক একটি ব্যবসা। তবে সব ব্যবসার মতই এই ব্যবসার ক্ষেত্রেও কিছু প্রতিকূলতা আছে।

স্থানীয় মাছ উৎপাদনকারীরা তাদের হ্যাচারিতে মাছের প্রজনন করে। নিজেদের উৎপাদিত পোনা থেকে তারা মাছ চাষ করে বলে তাদের উৎপাদন ব্যয় খুব কম থাকে। তাই খুব কম দামে তারা মাছ বিক্রি করতে পারে। যেটা আমার মতো যারা অন্য হ্যাচারি থেকে পোনা কিনে এনে মাছ চাষ করি, তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে গ্রাহকদের একটি বড় অংশ তাদের কাছ থেকে মাছ কিনতে বেশি আগ্রহী থাকে। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমাকেও হ্যাচারি স্থাপনে বিনিয়োগ করতে হবে।

আমি আমার মাছের ব্যবসাটি চালিয়ে যাব, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ধীরে ধীরে আমি একে প্রসারিত করতে চাই। আমার আরো কিছু পুকুর খননের পরিকল্পনা রয়েছে। একবার যখন এই ব্যবসায় ঢুকেছি, মাছ নিয়ে যাবতীয় যত ধরণের ব্যবসা আছে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমি কাজ করতে চাই। আমি এমন এক দিনের স্বপ্ন দেখি, যেদিন আমার ব্যবসায় আমি অন্যকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে পারব। তবে আমি তাড়াহুড়ো করব না, আস্তে আস্তে মাছ ব্যবসার সব খুঁটিনাটি সম্পর্কে শিখে আমি এগোতে চাই। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমি আমার উদ্যোগকে সফল করবই।