Ismail Hossen, Rajshahi
অদম্য চেতনার গল্প
1,777 Views

আমি আমার অনার্স এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বেশ কিছুদিন হল শেষ করেছি। আমিও অন্য সবার মতোই, পড়াশোনা শেষ করে একটি ভালো চাকরি করার কথা চিন্তা করতাম। কিন্তু আমাকে অনেকটা দিন বেকার থাকতে হয়েছিল ভালো চাকরির সুযোগ না থাকায়। আমার এরকম বিপর্যস্ত সময়ের মাঝেই, বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা কোনভাবেই তাকে বাঁচাতে পারলাম না। হঠাৎ করেই আমার পুরো জীবন এক নতুন মোড় চলে আসে। রাতারাতি আমাকে সব গুছিয়ে নিতে হয়েছিল। আমার ছোটবোনের দায়িত্ব এখন আমার কাছে চলে এসেছিল। আমার আর চাকরির সন্ধানে সময় নষ্ট করার সুযোগ ছিল না। তাই, আমি আমার ও আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে ব্যবসায় নেমে পড়ি।

এভাবেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার পথচলা শুরু হয়। আমার নিজের একটা পুকুর ছিল। তাই সেখানে মাছ চাষ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। উদ্যোক্তা হিসেবে সর্বপ্রথম বাঁধা ছিল মাছচাষ সম্পর্কে কোন পূর্ব ধারণা বা অভিজ্ঞতা না থাকা। আমাকে নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হয়েছে। আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম এবং কখনও হাল ছাড়িনি। বর্তমানে, আমার একটি সফল মৎস্য ব্যবসা আছে যা আমি গত ৩ বছর ধরে ভালোভাবে পরিচালনা করছি। আমার খামার বিভিন্ন ধরনের মাছ, যেমনঃ রুই, কাতোল, মৃগুয়েল এবং জাপানি সিলভার কার্প চাষ করে থাকি। রুই থেকে আমার সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে এবং জাপানি সিলভার কার্প ও অনেক বিক্রি হয়ে থাকে।

মহান আল্লাহর রহমতে, আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের থেকে আমার পেশাগত সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন সমালোচনা বা কটু কথা শুনতে হয়নি। তারা বরং প্রথম থেকেই আমাকে মানসিকভাবে অনেক সাহায্য করেছে। তাই এখন আমার একটি সফল ব্যবসার পাশাপাশি নিজের উপরে  আত্মবিশ্বাসও অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুরুর দিকে আমার যাত্রা এতটা সহজ ছিল না। তবে, আমি অনেক হৃদয়বান মানুষের সাহায্য পেয়েছিলাম। আমি পুঠিয়া শাখার আরডিআরএস এর সাথে যুক্ত ছিলাম। সেখানে আমি বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পেয়েছি যা আমাকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার পথ সহজ করে দিয়েছে। আমি তাদের কাছ থেকে লাইটক্যাসল পার্টনার্স সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। লাইটক্যাসল পার্টনার্স থেকে আমি একটি ব্যবসা আর্থিকভাবে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এসকল কিছুই আমার ও আমার ব্যবসার বিকাশে অনেক ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।

কোভিড-১৯ আমাকে অনেক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছে। যেকোনো ধরনের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। আমি আমার মাছ শহরের বাজারে নিয়ে যেতে না পারায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। চোখের সামনে আমার অনেক মাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। খাবারের বাজারেও ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করল। সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমি শুধু পোনা নিয়ে কাজ করার শুরু করি। আমি স্থানীয় মৎস্য খামারগুলোতে আমার পোনাগুলো বিক্রি করে দেই যেন শহরের বাজারে বড় মাছ বিক্রি করতে না হয়। এভাবে আমি কিছু অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

এখন আমি আমার ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য ২-৩ লক্ষ্ টাকার ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছি। বিনিয়োগটি দিয়ে আমি আরও পুকুর কিনে সেখানে বেশি পরিমাণে মাছ চাষ করতে চাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুদের অতিরিক্ত হার। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে এতো বেশি হারে ঋণ পরিশোধ করা খুবই কঠিন। আমি যদি কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কম হারে ঋণ দেওয়া হয় তাহলে আমার জন্য অনেক উপকার হতো। আমি আমার ব্যবসার জন্য ঋণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র প্রায় প্রস্তুত করে ফেলেছি। আমি আশা করছি খুব জলদি আমি একটু ইতিবাচক ফলাফলের মুখ দেখতে পাব।