আমার বেড়ে ওঠাই হয়েছে সংগ্রাম এবং কষ্ট দেখে। আমার পরিবারে সবসময়ই আর্থিক সমস্যা লেগেই থাকত। বিষয়টা আমাদের জন্য ছিল অনেক ভয়াবহ। এমন একটি পরিস্থিতিতে যেখানে বেঁচে থাকাটাই আমার জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছিল সেখানে লেখাপড়াকে মনে হতো বিলাসিতাস্বরূপ। সেজন্য আমার জীবনের প্রাথমিক পর্যায়েই আমার পড়াশুনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। পরে চট্টগ্রামে একটি রেলওয়ে কন্সট্রাকশন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ পাই।
রেলওয়ে কন্সট্রাকশনে যোগদান করার মূল কারণ ছিল আমার বাবা এই সেক্টরে সারাজীবন কাজ করে এসেছেন এবং আমিও পরিচিত ছিলাম। তাই, আমি ১৯৯২ সালে, আমার নগরী থেকে প্রায় ৬০০ কিমি দূরে কিভাবে রেলওয়ে সরঞ্জাম বানানো হয় তা শিখতে চলে গিয়েছিলাম। যখন আমি সেখানে কাজ শিখছিলাম, তখন আমি অনেক প্রভাবশালী লোকের সাথে যোগাযোগ করা সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার জন্য অন্যদের সাথে যুক্ত হওয়া খুবই প্রয়োজনীয় ছিল কেননা আমি নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছিলাম। আমি অনেকের সাথে এই বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে আমার কাজ করা শুরু করার প্রায় দীর্ঘ ১২ বছরের মাথায় সৈয়দপুরে ফিরে আসি স্বপ্নপূরণের জন্য।
মের্সাস নাইম ইঞ্জিনিয়ারিং নামটি আমি বেছে নিলাম আমার ব্যবসার জন্য। আমি প্রথমে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে তা বিক্রি করা শুরু করি। এভাবে যখন আমি বাজারে নামডাক প্রতিষ্ঠা করলাম তখন ব্যবসাকে আরও বড় করার প্রকল্প নিই। আমি একটি কারখানা চালু করে সেখানেই নিজের কারিগরদের দিয়ে যন্ত্রপাতি তৈরি করা শুরু করি।
বাজারে খুব কম প্রতিযোগিতা থাকার কারণে, আমাকে কখনই কোনও বড় ধরনের ঝঞ্ঝাটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি। আমার ব্যবসার সাথে জড়িত প্রায় ৩০ জনের বেশি কর্মীরা অনেক ভালভাবেই তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে। মূলত তারাই আমার ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চালিকাশক্তি।
২০২০ সালের আগে আমার বুঝতে হয়নি যে বাজারে ধ্বস পড়ে যাওয়া কতোটুকু শোচনীয় হতে পারে। করোনার মহামারী আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পায়ের নিচের জমিন ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। কোন অর্ডার বা বিক্রি ছাড়াই আমাদের মাসের পর মাস থাকতে হয়েছে। আমি তাও আমার কোন কর্মীকে ছাটাই করিনি। বরং তাদের জীবিকার সবটুকু দায়ভার আমি নিয়েছিলাম। আমরা কোনোমতে সে বীভৎস পরিস্থিতি পার করতে সক্ষম হয়েছি।
এখন যেহেতু সবকিছু আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তাই আশা করছি তেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আর যেতে হবে না। সত্যি বলতে, ছোট বেলা থেকে সংগ্রামের মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠার পড়ে বর্তমানে আমি যেমন আছি তা বিধাতার অশেষ নিয়ামতসরূপ। আমার অতীত আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস যোগায় হার না মেনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
সম্প্রীতি আমি বি-স্কিলফুল এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম যেখানে তারা আমাকে করোনার খারাপ সময় থেকে উত্তরণের বিষয়ে অনেক পরামর্শ দিয়েছে। আমি আশা করছি তাদের সহায়তা আমার ব্যবসাকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি আশা করি এই অস্থির কোভিড-১৯ পরিস্থিতি শীঘ্রই শেষ হবে এবং সমস্ত উদ্যোক্তা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারবে।