Lipika Golder
জয়তু ডেইরি ফার্ম
1,253 Views

আমার বিয়ের পরে, কোন ব্যবসা করার কথা কখনও চিন্তা করিনি। যদিও আমার শাকসবজি ও কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদনের অভিজ্ঞতা ছিল, কিন্তু তা ছিল ক্ষুদ্র পরিসরে। পরবর্তীতে, আমার শ্যালকের মেয়ে তন্বী এবং স্থানীয় উদ্যোক্তা জীবনানন্দ রায়ের পরামর্শে, আমি আমার প্রধান পণ্য হিসাবে ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে আমার ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবি। এভাবেই আমার উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে ওঠার জীবন শুরু হয়।

আমার ব্যবসা শুরু করার পর আরও ৬ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। জয়তু ডেইরি ফার্ম ছিল আমার স্বামী এবং আমার উদ্যোগ। আমি আমাদের সবজি বাগান এবং দুগ্ধ খামারে সাথে ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবসা যুক্ত করি। প্রাথমিকভাবে, মানুষ ভার্মিকম্পোস্ট সম্পর্কে সন্দিহান ছিল কারণ তারা এর সুবিধা এবং দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু, শীঘ্রই তারা বুঝতে পারে যে এটি সম্পূর্ণ জৈব সার যা খুবই কার্যকর। আমি অনেক কৃষকের কাছ থেকে ৮-১০ কেজি করে ভার্মিকম্পোস্টের অর্ডার পেতে শুরু করি। এভাবে আমার ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

ভার্মিকম্পোস্ট ছাড়াও আমি আমাদের বাড়ির উঠোনে তাজা শাকসবজি যেমন ওল, আলু চাষ করি। এই সবজি রোপণের সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে আমি আমার ভার্মিকম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে পারি যা অন্যদেরও আগ্রহী করে তোলে। যদিও ফসলের উৎপাদন বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, আমি প্রায় সময়েই ভাল ফলাফল পেয়েছি। আমি আমার ভার্মি কম্পোস্ট এবং সবজি বিক্রয় থেকে প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকার বেশি উপার্জন করতে পারি।

এর পাশাপাশি, আমাদের খামারে ৮ টি বাছুরসহ গরু আছে এবং এদের দেওয়া খাঁটি দুধ থেকেও আমাদের ভাল অর্থ উপার্জন হয়। আসলে আমাদের কাজের সকলক্ষেত্র খুবই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের উঠোনের ঘাস খেয়ে গরুগুলো বড় হয় এবং তাদের উচ্ছিষ্ট মাটিকে উর্বর করে যা আমাদের ফসলের উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গরুগুলো দৈনিক ৩-৪ কেজি দুধ দেয় যা আমরা বাসাবাড়ি ও দোকানে বিক্রি করি। এখান থেকে প্রতিদিন আমাদের আয়ে আরও ৪০০০ টাকার মতো যোগ হয়।

মহামারী পরিস্থিতি এমন কিছু ছিল যা আমাদের কল্পনারও বাহিরে ছিল। আমাদের কম্পোস্টের জন্য অর্ডার ছিল না বললেই চলে কারণ মানুষের কোন আর্থিক স্থিতিশীলতা ছিল না। তাই, কয়েক মাস ধরে আমাদের ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা খুব কম ছিল। মহামারীর আগে, আমরা অনায়াসেই ২-৩ মণ কম্পোস্ট বিক্রি করতাম, কিন্তু তা পরবর্তীতে ১০ কেজিরও নিচে নেমে আসে। এর ফলে আমাদের সবজি উৎপাদনেও প্রভাব পড়ে। তবুও, আমরা এর থেকে কিছুটা লাভ করতে পারি। এখন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। কৃষক এবং জমির মালিকরা আবার সচ্ছল হয়ে উঠছে এবং আমাদের কাছ থেকে কম্পোস্টের অর্ডার দিচ্ছে। আমরা আশা করি খুব শীঘ্রই ব্যবসা আবার স্থিতিশীল হবে।

লাইটকাস্টল পার্টনার্স আমাকে একটি ব্যবসা পরিচালনা ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়ের সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয় যা আমার জন্য শিক্ষণীয় ছিল। আমি মনে করি এই ধরনের আরো সেশন উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা শিখতে সাহায্য করবে।

বর্তমানে, আমি গরুদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত ঘর তৈরির পরিকল্পনা করেছি। একটি আবাসন ব্যবস্থা তাদের পরিচালনা করা সহজ এবং প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে তাদের রক্ষা করবে। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমার কাছে এখনও যথেষ্ট পুঁজি নেই, কিন্তু আমি আশা করছি শীঘ্রই আমি আমার ব্যবসা আরও কার্যকরভাবে প্রসারিত করতে পারব।